দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মিয়ানমারে দশ জন রোহিঙ্গা পুরুষ এবং বালককে হত্যার অভিযোগে যে সাত সেনা সদস্যকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল তাদের দণ্ডভোগ শেষ হওয়ার অনেক আগেই জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। খবর বিবিসির

২০১৮ সালে এই সাত জনকে দশ বছরের সাজা দেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে রাখাইনের ইন দিন গ্রামে হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল।

কিন্তু এ ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত সাত সেনা সদস্যকে গত বছরের নভেম্বরেই জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে খবর দিচ্ছে রয়টার্স।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হয় সেই ঘটনায় একমাত্র এই সাতজনেরই সাজা হয়েছিল।

ঐ অভিযানের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।

সোমবার মিয়ানমারের কারা দফতরের একজন মুখপাত্র জানান, ইন দিন গ্রামের হত্যাকাণ্ডের জন্য সাজাপ্রাপ্তদের কেউ আর তাদের কারাগারে নেই।

দন্ডপ্রাপ্ত সৈনিকদের একজন রয়টার্সের কাছে স্বীকার করেছেন যে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তবে এবিষয়ে কিছু তিনি বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, "আমাদের চুপ থাকতে বলা হয়েছে।"

কারাগারে তাদের সঙ্গে ছিলেন এমন দুজন বন্দী জানিয়েছেন গত নভেম্বরে এই সেনাদের মুক্তি দেয়া হয়। তাদের দশ বছরের সাজা হলেও সাজা খাটতে হয়েছে এক বছরেরও কম।

আর যে দুই সাংবাদিক এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ফাঁস করেছিলেন তাদের সাজা হয়েছিল সাত বছরের।

ওয়া লোন এবং কিয়া সো ও নামের এই দুই সাংবাদিককে ১৬ মাস কারাভোগের পর সম্প্রতি প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেয়া হয়।

ইন দিন গ্রামের এই হত্যাকাণ্ড ফাঁস করায় রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর ঘটনায় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

কী ঘটেছিল ইন দিন গ্রামে

রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গ্রামের অনেক মানুষের ভাষ্য ছিল। সেখানে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহনকারী থেকে শুরু করে বৌদ্ধ গ্রামবাসীদেরও কথা ছিল। তারা স্বীকার করেছিল যে তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করেছে, তাদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ছিল আধাসামরিক বাহিনী সদস্যদেরও সাক্ষ্য, যারা সরাসরি সেনাবাহিনীকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছিল।

একদল রোহিঙ্গা পুরুষ একটি সাগর সৈকতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের বাড়িঘরে হামলা শুরু হওয়ার পর। এরপর গ্রামের বৌদ্ধ পুরুষদের নির্দেশ দেয়া হয় একটি কবর খোঁড়ার জন্য। দুজন রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে হত্যা করে বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা। বাকী আটজনকে গুলি করে হত্যা করে সেনাবাহিনী।

এটি ছিল মিয়ানমারে এ ধরনের ঘটনায় সেনা সদস্যদের সাজা পাওয়ার প্রথম ঘটনা।

সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত স্বীকার করে যে গত বছরের এপ্রিলে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল।

তবে এই ঘটনায় রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। দুজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এরা একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করার পর তাদের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের কিছু দলিল তুলে দেয়া হয়েছিল।

এরপর রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের 'সরকারি গোপনীয়তা আইন' ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু পরে দুই পুলিশ কর্মকর্তার একজন আদালতে সাক্ষ্য দেন যে রেস্টুরেন্টের বৈঠকটি ছিল 'সাজানো' যাতে করে দুই সাংবাদিককে ফাঁদে আটকানো যায়।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/মে ২৭,২০১৯)