রমজান প্রতিদিন
নারীদের ইতিকাফ
এ.কে.এম মহিউদ্দীন
আজ ২২ রমজান মঙ্গলবার, নাজাতের দশকের দ্বিতীয় দিন। আর মাত্র সাত বা আট দিন বাদে অনুষ্ঠিত হবে মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এখন রোজাদারের হৃদয়ে খোদা প্রেমের নূর চমকিত। যে কোন মুমিন-মুমিনার একমাত্র প্রধান টার্গেট জান্নাত। রমজানের প্রথম দুই দশকের চেয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে এই নাজাতের দশকে পুরস্কৃত করা হয়, বিবেচনা করা হয় বেহেশতের জন্য। এ প্রাপ্তির আকাঙক্ষায় পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েরাও ইতিকাফ করেন। মেয়েদের ইতিকাফ সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো। পাশাপাশি আজকের রাত অর্থাৎ ২৩ রমজানের দিবাগত রাতের ফজিলত সম্পর্কেও বর্তমান কলামে দৃকপাত করা হয়েছে।
নারীদের ইতিকাফ
আয়েশা [রা.] থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল [সা.] রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার কথা বলেন, আয়েশা তার কাছে অনুমতি চান। তিনি তাকে অনুমতি প্রদান করেন। হাফসা আয়েশার কাছে তার জন্য অনুমতি নেয়ার অনুরোধ করেন, তিনি তাই করেন। এ দেখে যয়নব বিনতে জাহাশ তাঁবু তৈরির নির্দেশ দেন, তার জন্য তাঁবু তৈরি করা হল। আয়েশা বলেন: রাসূল [সা.] সালাত শেষে তার তাঁবুতে যান, তিনি সেখানে অনেক তাঁবু দেখতে পান। জিজ্ঞেস করেন, এগুলো কী? তারা বলল: আয়েশা, হাফসা ও যয়নবের তাঁবু। রাসূল [সা.] বললেন: “এর দ্বারাই কি তোমরা নেকির আশা করেছ?! আমি ইতিকাফই করব না”। তিনি ফিরে যান। অতঃপর রমজান শেষে শাওয়ালের দশ দিন ইতিকাফ করেন”। বুখারি ও মুসলিম। অপর বর্ণনায় আছে: রাসূল [সা.] যখন ইতিকাফ করার ইচ্ছা করতেন, ফজর সালাত আদায় করে ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। একদা তিনি মসজিদে তার জন্য তাঁবু টানাতে আদেশ করলেন, তাঁবু টানানো হল, তিনি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করে ছিলেন। যয়নব তার জন্য তাঁবু টানাতে নির্দেশ করলেন, টানানো হল, নবীর [সা.]অন্যান্য স্ত্রীগণ তাঁবু টানাতে নির্দেশ করলেন, তাদের জন্য তাঁবু টানানো হল। তিনি যখন ফজর সালাত আদায় করলেন, দেখলেন অনেকগুলো তাঁবু। তিনি বললেন: তোমরা কি নেকির আশা করেছ? তিনি তার তাঁবু খুলে ফেলার নির্দেশ দেন ও রমজানের ইতিকাফ ত্যাগ করেন, অতঃপর শাওয়ালের প্রথম দশকে ইতিকাফ করেন”।
শিক্ষা ও মাসায়েল: এক. মহিলাদের মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ, যদি ফিতনার আশঙ্কা না থাকে।
দুই. নারী তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ইতিকাফ করবে না, এতে কারো ইখতিলাফ নেই। যদি সে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ইতিকাফ করে, তাহলে স্বামীর অধিকার রয়েছে তার ইতিকাফ ভঙ্গ করানো। ইতিকাফের অনুমতি দেয়ার পর স্বামী যদি কোন কারণে তার ইতিকাফ ভাঙ্গতে চায়, তাহলে তার অধিকার রয়েছে।
তিন. ইতিকাফ আরম্ভ করে প্রয়োজন হলে তা ভঙ্গ করা বৈধ।
চার. স্বামীর জন্য নিজ স্ত্রী ও পরিবারকে আদব শিা দেয়া, তাদের সংশোধন করা জায়েয।
পাঁচ. যদি ইতিকাফকারী নারীর ঋতুস্রাব হয়, তাহলে ঋতুস্রাব তার ইতিকাফ ভেঙ্গে দিবে, সে মসজিদ ত্যাগ করবে, অতঃপর পবিত্র হয়ে পূর্বের ইতিকাফ শুরু করবে। তেরো. যদি কেউ নফল ইবাদতের নিয়ত করে, কিন্তু এখনো তা শুরু করেনি, তাহলে সে তা একেবারে ত্যাগ করতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে পরবর্তীতে আদায় করা বৈধ।
তেইশে রমজান লাইলাতুল কদর তালাশ করা
আব্দুল্লাহ ইবন উনাইস জুহানি [রা.] থেকে বর্ণিত, রাসূল [সা.] বলেছেন: “আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি দেখেছি আমি সে রাতের সকালে পানি ও মাটিতে সেজদা করছি। তিনি বলেন: আমাদের তেইশ তারিখের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। রাসূল [সা.] আমাদের সাথে সালাত আদায় করে ঘুরে বসেন, তখন তার কপাল ও নাকের ওপর পানি ও মাটির আলামত ছিল। তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ ইব্ন উনাইস বলতেন: সেটা ছিল রমজানের তেইশ তারিখ”।ইমাম মালেকের এক বর্ণনায় আছে, আব্দুল্লাহ ইব্ন উনাইস নবীকে বলেন: “হে রাসূল, আমি খুব দূরের লোক, আমাকে একটি রাতের নির্দেশ দেন যেন আমি আসতে পারি। তিনি বললেন:
“তুমি রমজানের তেইশের রাতে আস”।ইবন আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি রমযানে ঘুমিয়ে ছিলাম, আমাকে নিয়ে আসা হল, বলা হল: আজ কদরের রাত। তিনি বলেন: আমি তন্দ্রাসহ দাঁড়িয়ে রাসূলের তাঁবুর রশি ধরে তার নিকট আগমন করলাম, তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বলেন: আমি লক্ষ্য করলাম সে রাত ছিল তেইশের রাত”।
আবু হুযাইফাহ রাসূলের [সা.] জনৈক সাহাবি থেকে, তিনি নবী [সা.] থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেছেন: “আমি লাইলাতুল কদরের সকালে চাঁদের দিকে দেখলাম, আমি তা গামলার অর্ধেক টুকরার ন্যায় দেখলাম। আবু ইসহাক সাবিহি বলেন: তেইশের রাতে চাঁদ অনুরূপ হয়”।আবু হুরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“আমরা রাসূল [সা.] এর নিকট লাইলাতুল কদরের আলোচনা করলাম, তিনি বললেন: ‘তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ করতে পারে সে সময়ের কথা যখন চাঁদ উদিত হয় গামলার অর্ধেক টুকরার ন্যায়?”
শিক্ষা ও মাসায়েল
এক. নবীকে [সা.] লাইলাতুল কদর ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, এর হিকমত হয়তো: মানুষ যেন অলস না হয় ও অন্য রাতে ইবাদত ত্যাগ না করে। দুই. সাহাবিগণ ইবাদত ও জিকর করার উদ্দেশ্যে ফযিলতপূর্ণ রাত অন্বেষণ করতেন ও তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। তিন. তেইশের রাত ফযিলতপূর্ণ, এ রাত লাইলাতুল কদরের একটি সম্ভাব্য রাত, অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এ রাতে জাগ্রত থাকা ও অধিক ইবাদত করা। চার. তেইশের রাতে চাঁদ বড় গামলার [অর্ধেকের] ন্যায় হয়, এসব হাদিস দ্বারা বুঝা যায় ওই রাতটি সে বছর লাইলাতুল কদর ছিল।
সম্মানিত পাঠক, আসুন আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করি বাকি ক’টা রমজান ঠিক মত সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অতিবাহিত করতে। প্রভু দয়াময় যেন আমাদের প্রত্যেককে তার প্রতিশ্রুত জান্নাতের জন্য বিবেচনা করেন। আমিন।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ২৮,২০১৯)