দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দেখতে দেখতে অপেক্ষার পালা শেষের ক্ষণে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বাদশ আসরের ময়দানি লড়াই শুরু হতে আর কয়েকঘণ্টার অপেক্ষা। উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৩০ মিনিটে দুই হট-ফেভারিট ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে।

একদিকে ইংল্যান্ডের বিশ্বসেরা ব্যাটিংলাইন ও অন্যদিকে সাউথ আফ্রিকার বিশ্বসেরা বোলিং আক্রমণ। লন্ডনের দ্য ওভাল স্টেডিয়াম রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছে। শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে গতির লড়াই।

ঘরের মাঠে স্বাগতিক দর্শকদের একচেটিয়া সমর্থন ইংল্যান্ডকে অনেকটাই চাঙা রাখবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সাউথ আফ্রিকাও ছেড়ে কথা বলবে না, সেটিও সহজেই অনুমেয়।

গত বিশ্বকাপে বিপরীতমুখী অবস্থানে ছিল ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকা। চার বছর আগের আসরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় ইংলিশরা। অন্যদিকে সেমিফাইনালে শেষ ওভারের নাটকীয় হারে হৃদয়ভাঙে প্রোটিয়াদের।

দুই দলের মুখোমুখি সর্বশেষ লড়াইয়ে জয়ী দলটির নাম সাউথ আফ্রিকা। তবে বিশ্বকাপে দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাতে বিজয়ীর হাসি সঙ্গী হয়েছিল ইংল্যান্ডের। ২০১১ বিশ্বকাপে লো স্কোরিং ম্যাচে ১৭১ রান করেও সাউথ আফ্রিকাকে হারায় ইংলিশরা।

মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য কিছুটা এগিয়ে সাউথ আফ্রিকা। দুই দলের ৫৯ বারের দেখায় সাউথ আফ্রিকার জয় ২৯টি, বিপরীতে ইংল্যান্ডের জয় ২৬টি। তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে এবং একটি টাইয়ে শেষ।

১৯৯৯ সালে শেষবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে অংশ নেয় ইংল্যান্ড। সেবার লর্ডসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় জয়ে শুরু করে ইংলিশরা। দুই দশক পর একই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি চায় মরগানের দল।

বিশ্বকাপের হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের আগে নিজেদের আদর্শ প্রস্তুতি সেরে রেখেছে সাউথ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে আমলা-ডু প্লেসিসের দল নিজেদের ঝালিয়ে রেখেছে।

অন্যদিকে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে ৪-০ ব্যবধানে পরাজিত করে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ইংল্যান্ড।

লন্ডনের দ্য ওভালে হাই-স্কোরিং ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর চারবার ৪০০ পেরোনো স্কোর গড়েছে ইংল্যান্ড। এই সময়ে তিনবার ৪০০ প্লাস স্কোর গড়েছে সাউথ আফ্রিকা। ফলে উদ্বোধনী ম্যাচে রানবন্যা হলে চমক বলা পথ কমই!

ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপে তারকার কমতি নেই। দুই মারকুটে ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো ইতোমধ্যেই প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘুম হারাম করেছেন। কমপক্ষে ১ হাজার রান করেছেন এমন জুটির মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট এই দুই ইংলিশ ওপেনারের।

মিডল অর্ডারে ইয়ন মরগান ও জো রুটের মতো নির্ভরশীল ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে জস বাটলার বর্তমান সময়েরই অন্যতম সেরা বিধ্বংসী ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান।

বোলিংয়েও ইংল্যান্ডের শক্তিমত্তা চোখে পড়ার মতো। জফরা আর্চার অসাধারণ গতি ও ইয়র্কারে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত। ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত এই তারকা পেসার সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন ক্রিস ওকস ও মার্ক উডকে। স্পিন আক্রমণে মঈন আলির সঙ্গে থাকবেন আদিল রশিদ। ফলে পূর্ণ শক্তির একাদশ নিয়েই আফ্রিকানদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড।

বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ আসরে তিনবার ফাইনাল খেলে একবারও শিরোপা না জেতা ইংল্যান্ড গত ছয় আসরে সেমির মুখ দেখেনি। এবার ঘরের মাঠে হট-ফেভারিট হিসেবেই শুরু করবেন স্টোকস-মরগানরা। দর্শকদের প্রত্যাশার বাড়তি চাপও থাকবে স্বাগতিকদের উপর।

তবে মরগান সেই প্রত্যাশার চাপে ঘাবড়ে যাচ্ছেন না মোটেই। যেমনটা বলছিলেন ম্যাচের আগেরদিন, ‘আমাদের উপর এত প্রত্যাশা করা এবং ফেভারিট তকমা দেয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গত দুই বছর ধরে আমাদের দারুণ ফর্ম, বিশেষ করে মাঠে আমাদের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। এই কারণেই আমাদের উপর প্রত্যাশার চাপটা বেশি।’

বিপরীতে সাউথ আফ্রিকাও শক্তিশালী দল নিয়েই ইংল্যান্ডে পা রেখেছে। তবে প্রোটিয়ারা নিশ্চিতভাবে এবি ডি ডিভিলিয়ার্সকে মিস করবে। গত বছর হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান এ মারকুটে ব্যাটসম্যান। অবশ্য তার অভাব পূরণ করার মতো প্রতিভার আছে প্রোটিয়া দলে।

নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে ইনজুরির কারণে ডেল স্টেইন একাদশের বাইরে চলে যাওয়ায় সাউথ আফ্রিকার বোলিং শক্তি কিছুটা হলেও তেজ হারিয়ে ফেলেছে। ইংল্যান্ড সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করতে চাইবে নিশ্চিত।

স্টেইনের অনুপস্থিতিতে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেবেন সময়ের আলোকিত গতিতারকা কাগিসো রাবাদা। সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন ক্রিন মরিস এবং লুনগি এনডিগি ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের মধ্য হতে একজনকে। মরিস ও রাবাদা নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে ইংল্যান্ডকে।

স্পিন বোলিংঅ্যাটাকে সাউথ আফ্রিকার শক্তিমত্তাও সমীহ করার মতো। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তৃপ্তি নিয়েই ইংল্যান্ডে পা রেখেছেন ইমরান তাহির। অন্যদিকে তাবরেইজ শামসিও মায়াবীঘূর্ণিতে মুন্সিয়ানা দেখিয়ে চলেছেন। ফলে স্টেইন না থাকলেও বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে সহজে ছেড়ে কথা বলবে না সাউথ আফ্রিকা।

ইংল্যান্ড হট-ফেভারিট হওয়ায় সাউথ আফ্রিকার উপর প্রত্যাশার চাপ কম থাকবে বলে বিশ্বাস ফ্যাফ ডু প্লেসিসের। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছেন প্রোটিয়া দলনায়ক, ‘ইংল্যান্ড ফেভারিট। সুতরাং এই কারণে আমাদের উপর চাপ কম থাকবে। আর আমরা স্বাধীনভাবে খেলতে পারবো।’

ইংল্যান্ডের লক্ষ্য প্রথম শিরোপার অভিযানে ইতিবাচক সূচনা। সেখানে সাউথ আফ্রিকার লক্ষ্যও জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা। বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকা কতদূর যেতে পারবে লন্ডনের দ্য ওভালে, তার বড় পরীক্ষাই হবে। অপেক্ষা রোমাঞ্চের।

সম্ভাব্য একাদশ
ইংল্যান্ড: জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, ইয়ন মরগান, জস বাটলার, বেন স্টোকস, মঈন আলি, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, জফরা আর্চার, লিয়াম প্লাঙ্কেট, মার্ক উড।

আফ্রিকা: এইডেন মার্করাম, কুইন্টন ডি কক, হাশিম আমলা, ফন ডার ডুসানে, ডেভিড মিলার, ক্রিস মরিস, আন্দিলে ফেলুকোয়ও, জেপি ডুমিনি, কাগিসো রাবাদা, লুনগি এনগিডি, ইমরান তাহির।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/মে ৩০,২০১৯)