১১০ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ
বাগেরহাটের সেই নিউ বসুন্ধরার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
খুলনা ব্যুরো, দ্য রিপোর্ট :এক লাখ টাকা দিলে মাসে আড়াই হাজার টাকা লাভ এবং চার বছরে টাকা দ্বিগুণ- এমন প্রতারণার মাধ্যমে জনগনের কাছে থেকে একশ' দশ কোটি টাকা গ্রহণের অভিযোগে বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধধারার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খুলনা অফিস ।
সহকারী পরিচালক মো: শাওন মিয়া বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা করেন। একই ধরনের অপরাধের জন্য শেফ ইসলামিক ব্যবসায়ী কো-আপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করেছে ।
মামলা বিবরণে বলা হয় , নিউ বসুন্ধধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড সাধারণ জনগনের একশত দশ কোটি ৩১ লাখ নয় হাজার টাকা প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছে। এটা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২ [গ] ধারায় অপরাধ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে ,জনগনের সাথে প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই অর্থ অর্জন করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২ [ফ][অ] ধারা অনুযায়ী তিনি এ অর্থ স্থানান্তর রুপান্তর , হস্তান্তর করে অপরাধ করেছেন। এ অপরাধলব্ধ আয় দ্বারা তিনি ও সহযোগীদের বিভিন্ন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। বৈধ প্রক্রিয়ায় তিনি এ সম্পদ অর্জন করেন নি বলে এ সম্পদ অবৈধ সম্পদ। অবৈধ সম্পদ অর্জনে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ অনুয়ায়ী দুর্নীতির অপরাধ। এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দালালদের মাধ্যমে নিরীহ জনগনকে ভুল বুঝিয়ে এক লাখে মাসে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৫০ হাজার থেকে কোটি টাকা পযর্ন্ত বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছেন । ১১০ মোটি টাকার সংগ্রহের বিপরীতে ৭৬ লাখ টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। যা গ্রাহকরা লভ্যংশ হিসাবে গ্রহণ করেছে ।
উল্লেখ্য নিউ বসুন্ধধারার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আব্দুল মান্নান তালুকদার নিজে মিডিয়াতে স্বীকার করে ছিলেন যে ৪০ হাজার গ্রাহক তার কাছে মোট ২ হাজার কোটি টাকা আমানত রেখেছে । কিন্তু দুদকের তদন্তে শুধু মাত্র আ: মান্নান তালুকদার ও তার পরিবারের নামে ৩০টি ব্যাংকে ১১ কোটি ৪৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে । এসব ব্যাংক একাউন্টে তদন্ত কালে ৬২ লাখ টাকা ব্যালেন্স ছিল। প্রতিটি ব্যাংক হিসাবে মালিক হিসাবে মান্নান তালুকদারের নাম লেখা রয়েছে । প্রতিটি টাকাই জমা দেওয়ার সাথে সাথে তা উত্তোলন করা হয়েছে । মানিলন্ডারিং প্রতিরোধের আইনের ২ [য] ধারা অনুযায়ী এটি সন্দেহজনক লেনদেন। টাকাগুলি ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে । ওই টাকা মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে হস্তান্তর ,স্থানান্তর করে আ: মান্নান নিজ ও পরিবারবর্গের নামে ও তার প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তির নামে জমি কিনেছে । কিছু টাকার জমি কেনা হলেও বাকি টাকার কোন হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না । এর বাইরেও আরও শত কোটি টাকার উপরে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে সরাসরি হাতে হাতে জনগনের কাছ থেকে নিয়ে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে স্থানান্তর হস্তান্তর করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ।
এদিকে খুলনার শিববাড়ী শেফ ইসলামিক ব্যবসায়ী কো-আপারেটিব সোসাইটি লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত শুরু করেছে । তারাও নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট এর মত এক লাখ জমা দিলে ৫ বছরে দ্বিগুন এবং সাত বছরে তিনগুণ মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছে । নিউ বসুন্ধধারা মত এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন এবং তা পুত্র চরমোনাই পীরের অনুসারী । বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সেল এই প্রাথমিক তদন্তে একাধিক গ্রহকের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পেয়েছেন । ইতিমধ্যে সমবায় অধিদপ্তর হতে এই প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ ব্যাংকিং করার জন্য কারণ দর্শাতে বলেছে।
উল্লেখ্য অফিস পিওন থেকে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া মান্নান তালুকদারকে নিয়ে দ্য রিপোর্ট ইতোপূর্বে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
(দ্য রিপোর্ট/ এটি/ টিআই এম/ ৩০ মে ২০১৯)