রমজান প্রতিদিন
সারা বছরের রোজা
এ.কে.এম মহিউদ্দীন
রোববার ২৭ রমজান। এখন মুমিন হৃদয়ে ধ্বনি হচ্ছে রমজানের বিদায়ের সুর। এই ক্ষণে আল্লাহ্কে স্মরণ করি আরো বেশি বেশি। আর তার নিয়ামত রাজির শুকরিয়া আদায় করি। অবশ্যই আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিটি নেয়ামতে মুসলমানদের আনন্দিত হওয়া উচিত। রমজান মাস আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের মাঝে শীর্ষ পর্যায়ের একটি নেয়ামত। তাই এ রমজান প্রপ্তির কারণে তাদের খুশি হওয়া উচিত। আরো খুশি হওয়া উচিত, কারণ তারা রমজানের বদৌলতে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, সদকাসহ অন্যান্য ইবাদত করার সহজ সুযোগ পেয়েছে। এ খুশির পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করা উচিত।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
]قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ [(يونس: 58)
বলো, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম। [সূরা ইউনুস:৫৮]
প্রিয় পাঠক, রমজান মাস যদিও শেষ হয়ে গেছে, মুমিন ব্যক্তির আমল কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে শেষ হবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
]وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ[ (الحجر:99 )
অর্থাৎ, আর ইয়াকিন (মুত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।
নবী (সা.) ইরশাদ করেন, মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাই মুমিন ব্যক্তি সময় থাকতেই আমল-ইবাদত অব্যহত রাখে।
সুতরাং রমজান মাস শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃত মুমিন ব্যক্তির রোজার ইবাদাত কিন্তু শেষ হবে না। এটি সারা বছর চলতে থাকবে।উদাহরণত,
শাওয়াল মাসের ছয় রোজা
আবু আইউব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল অত:পর শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখল, সে যেন সারা জীবনই রোজা রাখল। (মুসলিম)
প্রতি মাসে তিন দিনের রোজা
এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজান মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখা সারা জীবন রোজা রাখার ন্যায়। (মুসলিম)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখার উপদেশ দিয়েছেন।
এ তিন দিনের রোজা আইয়ামে বীযে রাখা উত্তম। আইয়ামে বীয হলো, প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ। (মুসলিম)
আরাফার দিনের রোজা
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরাফার দিন রোজা রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ দিনে রোজা রাখলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
আশুরার দিনের রোজা
মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম (সাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমজান মাসের পর কোন রোজা সবচে উত্তম ? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহরম মাসের রোজা।
সাপ্তাহে সোম ও বৃহ:বারের রোজা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সোমবার রোজা রাখার গুরুত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে বললেন, এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়ত দান করা হয়েছে। অর্থাৎ এদিনেই আমার উপর কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে অপর একটি বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজা নিয়মিত রাখতেন।
শাবান মাসের রোজা
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান মাসের রোজা ছাড়া আর কোন মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতে দেখিনি। আর শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি পরিমাণে রোজা রাখতে দেখিনি।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ জুন ০২, ২০১৯)