রমজান প্রতিদিন
ঈদ এল কেমন করে
এ.কে.এম মহিউদ্দীন
আজ মঙ্গলবার ২৯ রমজান । আজ বাদেই কাল নতুবা পরশু, তারপরেই বহুপ্রতীক্ষিত মুসলমানদের জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতর বা রোজা ভঙ্গের উৎসব। প্রতিটি প্রাণে তাই খুশির অনুরণন। আবাল বৃদ্ধ বণিতা-যার যার মত প্রস্তুত আনন্দধারায় সামিল হতে। সিয়াম পালন তার এই অবারিত আনন্দকে করেছে নির্মল।
সব থেকে নিটল সত্য হলো প্রচ্যের দুটি প্রধান এই উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা নির্মলই শুধু নয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণও বটে। এই উৎসবের সূচনা সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
আনাস [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল [সা.] যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন,সেখানে দু’টি দিন ছিল, সেদিন দু’টিতে তারা আনন্দ-ফূর্তি করত। তিনি বললেন, এ দু’টি দিন কী ? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এতে আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূল [সা.] বলেন, খোদা তোমাদের এ দিন দু’টির পরিবর্তে আরো উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন, ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।
আবু উবাইদ মাওলা ইবন আযহার বলেন, আমি ওমর ইবন খাত্তাবের সাথে ঈদ করেছি, তিনি বলেন এ দু’টি দিনে রাসূল [সা.] সিয়াম নিষেধ করেছেন, রমজানের সিয়াম শেষে তোমাদের ঈদুল ফিতরের দিন। দ্বিতীয় দিন হচ্ছে ঈদুল আজহা, সেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানি থেকে খাবে।
আবু সায়িদ খুদরি [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী [সা.] ঈদুল ফিতর ও কুরবানির ঈদের সওম পালন নিষেধ করেছেন। ইবন আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিত, নবী [সা.] ঈদুল ফিতর দিনে বের হন, অতঃপর দুই রাকাত সালাত আদায় করেন, তার পূর্বাপর কোন সালাত আদায় করেননি।
উম্মে আতিয়াহ [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূল নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন যুবতী, ঋতুবতী ও কিশোরীদের নিয়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে যাই, তবে ঋতুবতীরা সালাত থেকে দূরে থাকবে, তারা দো‘আ ও কল্যাণে অংশ গ্রহণ করবে।
শিক্ষা ও মাসায়েল: এক. আল্লাহ তা‘আলা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা দান করে এ উম্মতের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। মুসলিম উম্মাহকে তিনি এর মাধ্যমে জাহেলি ঈদ ও উৎসব থেকে মুক্ত করেছেন।
দুই. আমাদের দু’টি ঈদ কাফেরদের ঈদ ও উৎসব থেকে বিভিন্ন কারণে আলাদা ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, যেমন:
(১). আমাদের ঈদ চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল, গণনার উপর নয়, যেমন কাফেরদের উৎসবগুলো গণনার উপর নির্ভরশীল।
(২). আমাদের দু’টি ঈদ মহান ইবাদত ও ইসলামের ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন সিয়াম, যাকাতুল ফিতর, হজ ও কুরবানি।
(৩). দুই ঈদে সম্পাদিত কাজগুলো ইবাদত, যা বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য দান করে, যেমন তাকবীর, সালাতুল ঈদ ও খুতবা ইত্যাদি, কাফেরদের ঈদ ও উৎসবের বিপরীত, যেখানে কুফর ও গোমরাহির প্রদর্শন হয়, বিভিন্ন প্রবৃত্তি ও শয়তানি কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়।
(৪). দুই ঈদের দিনে অনুগ্রহ, দয়া ও পরস্পর দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেমন সদকাতুল ফিতর, হাদিয়া ও কুরবানি।
(৫). আমাদের দু’টি ঈদ ভ্রান্ত আকিদা ও কুসংস্কারের সাথে সম্পৃক্ত নয়, যেমন নববর্ষ, নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যু, কারো স্মরণ, কোন ব্যক্তির মর্যাদা অথবা সাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তার সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং এ ঈদ দু’টি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য।
আমাদের ওপর ওয়াজিব হচ্ছে এসব নিয়ামতের মোকাবিলায় আল্লাহ তা‘আলার শোকর আদায় করা, তার নির্দেশ পালন করা ও তার নিষেধ থেকে বিরত থাকা, ঈদ, খুশি ও আনন্দের দিনে।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ০৪, ২০১৯)