গোরে শহিদে ঈদের জামাতে ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম
দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোরে শহিদে বড় ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে এবার ৬ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বলে দাবি আয়োজকদের।
এবারে ঈদুল ফিতরের জামাতটিই দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত; আয়োজকদের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপিও এমনটাই দাবি করেছেন।
হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, “আজকে (বুধবার) অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতে ৬ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঈদের নামাজ পড়তে দিনাজপুর গোরে শহিদ বড় ময়দানে লোকজন আসছেন।”
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোরে শহিদ বড় ময়দানে বুধবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে এই বিশাল ঈদ জামাতটি অনুষ্ঠিত হয়।
এখানে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী।
বৃহৎ এই ঈদের জামাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েমসহ সর্বস্তরের মুসল্লিরা এই নামাজে অংশ নেন।
দিনাজপুর ছাড়াও বগুড়া, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলাসহ আশ-পাশের জেলার মুসল্লিরাও এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন।
বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি আশপাশের ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা।
খানসামা উপজেলা থেকে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসা রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, “দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান আমাদের দিনাজপুরে। আমি এবারই প্রথম এখানে নামাজ পড়তে এসেছি। মানুষের সমাগম দেখে আমার বেশ ভালোই লাগছে।”
বড় এই ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের যাতে করে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়তে হয় সেজন্য অস্থায়ী ওজুখানা, পানি সরবরাহ ও পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়।
জঙ্গি হামলাসহ সব ধরনের নাশকতা ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বসানো হয় ওয়াচ টাওয়ার। র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ সব ধরনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঈদগাহের নিরাপত্তায় মোতায়েন ছিল। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিসহ সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়।
প্রায় ২২ একরের বিশাল এই মাঠে যেন গত বছরের তুলনায় আরও বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য গত কয়েকদিন ধরেই মাঠ প্রস্তুত করার কাজ সম্পন্ন করা হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। শোলাকিয়ার চেয়ে বড় জামাতের আয়োজন করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়ান) এর উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে।
পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ঈদগাহ মিনারের পেছনে করা হয়েছে অজুর ব্যবস্থা। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে।
ঐতিহাসিক গোড়-এ শহিদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। এবার নিয়ে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলো এই মাঠে।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েম জানান, যাতে করে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলা কিংবা নাশকতার ঘটনা না ঘটে সেজন্য ঈদের আগের দিন থেকেই র্যাব, গোয়েন্দা, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা এখানে মোতায়েন ছিলেন। স্থাপন করা হয়েছিল অস্থায়ী সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও ইন্টারনেট সুবিধাও ছিল পুরো মাঠজুড়ে।
বৃহৎ এই জামাতের মূল উদ্যোক্তা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম জানান, ঈদ-উল ফিতরের এই জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছে।
ঈদের জামাত সফল করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তবে মাঠের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখা গেছে, ৬ লাখ মানুষ গণনার বিষয়টি আনুমানিক! এখানে প্রকৃতপক্ষে উপস্থিতি গণনার কোনো যন্ত্র বা মেশিন ছিল না।”
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ০৫,২০১৯)