চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত বদল : রান্নাঘরে নারীদের নিশুতি লড়াই
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2019/06/05/_107245100_eid1.jpg)
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : শাওয়াল মাসে ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির দ্রুত সিদ্ধান্ত বদল নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে গৃহিণীদের।
পরিবারের জন্য ঈদের খাওয়ার আয়োজন করতে গিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত তাদের কাজ করতে হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রংপুরের গৃহিণী মমতাজ বেগম মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই ঈদের রান্নার আয়োজন করতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি রাত নয়টার দিকে জানায়, বুধবারের বদলে ঈদ হবে বৃহস্পতিবার। রান্নাঘরের ভোগান্তিটা শুরু হয় তখন থেকে।
"আমরা তো ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। রান্নাবান্নাও অনেকখানি শেষ। হঠাৎ করেই সন্ধ্যার পরে শুনলাম ঈদ হচ্ছে না," বলছিলেন তিনি, "এরপর আবার তারাবির নামাজ পড়া, সেহেরির জন্য রান্না করলাম। তারপর এসে আবার জানলাম বুধবারই ঈদ হবে। এটা কেমন!"
বুধবার ঈদ হচ্ছে না জেনে অনেক পরিবার তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।
ফ্রিজ থেকে বের করা কাঁচা মাছ-মাংস তারা আবার ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন।
পরে রাত ১১টায় যখন আবার ঘোষণা করে হলো যে ঈদ বুধবারই হবে তখন আবার সেই কাঁচা খাবার ফ্রিজ থেকে বের করতে হয়।
ঈদ হবে না জেনে গৃহকর্মী কিংবা রান্নাঘরের সাহায্যকারীদের বিদায় দিয়ে দেন অনেকে।
ফলে ঈদ একদিন এগিয়ে আসায় অনেক গৃহিণী বিপাকে পড়ে যান।
বিউটি পার্লারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েও বাধে গোলযোগ। ঈদ হবে না জেনে অনেকে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করেন।
ঈদ উপলক্ষে অনেকেই হাতে মেহেদি দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ঈদ হবে জেনে তারা সেটা মুছে ফেলেন।
বুধবার ঈদ হবে জেনে তাদেরকে আবার মেহেদির আয়োজন করত হয়।
আবীর খান নামে একজন বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় জানান, তার বাসায় সবাই রাত ন'টার খবর দেখেছেন যে বুধবার ঈদ হচ্ছে না। এর পর আর কোন খবর দেখেননি। সবাই রাত ১০টার পর ঘুমিয়ে পড়েন।
"রাতে সময়মত উঠে তারা সেহেরিও খান। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন ঈদ হচ্ছে বুধবার", তিনি লেখেন, "এরপর তাড়াহুড়ো করে রান্নার কাজে অনেক সমস্যা হয়েছে। এখন এই সমস্যার দায়ভার কি চাঁদ (দেখা) কমিটি নেবে?"
তারাবির নামাজ নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। ইমরান খান নামে এক বিবিসি ফলোয়ার ফেসবুকে জানান, "সারাজীবন আমি তারাবিহ পড়ে রোজা রেখেছি আজও পড়েছি। আর এখন বিরল সৌভাগ্য অর্জন করতে চলেছি রোজার পরিবর্তে ঈদের নামাজ পড়বো। ২৯ রমজানের মাসে ৩০টা তারাবিহ আদায় করলাম।"
তবে এর মাঝেই কেউ কেউ বিষয়টাকে খুশি মনেই মেনে নিয়েছেন।
যশোরের গৃহবধূ আফরোজা খাতুন বলছিলেন, মঙ্গলবারই তিনি খবর পেয়েছিলেন সৌদি আরবে ঈদ হয়েছে। সে অনুযায়ী বুধবার ঈদ হবে এটাই নিশ্চিত ছিলেন তিনি।
তাই দ্বিতীয় দফায় যখন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি রাত ১১টা নাগাদ জানায় যে বুধবারেই ঈদ হবে তখন তিনি খুশিই হয়েছেন।
"আমি নিশ্চিত ছিলাম। তারপরে জানলাম ঈদ হবে না। তাই বেশ খানিকটা বিভ্রান্তিতে পড়েছিলাম। এরপর যখন রাতে জানলাম (বুধবার) ঈদ হবে তখন বেশ খুশি হয়েছি।"
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সাথে একযোগে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি কাজ করে।
দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সেটি স্থানীয় প্রশাসন বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জেলা কমিটির কাছে পৌঁছায়।
পাশাপাশি, আবহাওয়া অধিদফতরের দেশজুড়ে যে ৭৪টি স্টেশন আছে সেখান থেকেও তথ্য নেয় চাঁদ দেখা কমিটি।
কিন্তু ঈদের দিন চূড়ান্ত করা নিয়ে বিভ্রান্তির ফলে জনগণের মনে এই কমিটির দক্ষতা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠেছে।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ জুন ০৫,২০১৯)