বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এমপিওভুক্তির কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রায় নয় বছর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত বন্ধ ছিল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু তার অসুস্থতার কারণে বাজেটের বাকি অংশ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারি করে। এরপর গত আগস্টে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া হয়। মোট ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করে।
যাচাইয়ে এমপিও নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করে যোগ্য প্রতিষ্ঠান হয়েছে ২ হাজার ৭৬২ টি। কিন্তু অর্থের অভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারছিল না। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হয়। তাতে মোট ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত অংশের বাজেট বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি সুসংবাদ দিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আমি প্রথমে আলোকপাত করতে চাই।
দীর্ঘদিন আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানাবিধ কারণে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমটি বন্ধ ছিল। এবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য এ বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, খুব শিগগির নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে তা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। এখন শেষ পর্যায়ের যাচাই-বাছাই চলছে।
এ ছাড়াও বাজেট বক্তৃতায় মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বর্তমানে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ (মূলত শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে এ বাবদ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করছেন।
এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার একটু পর জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামের বাজেট বই থেকে বক্তৃতা শুরু করার আগে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপনের জন্য স্পিকারের অনুমতি চান অর্থমন্ত্রী। স্পিকার অনুমতি দিলে প্রামাণ্যচিত্রটি উপস্থাপন করা হয়।
শুরুতেই মাল্টিমিডিয়া প্রজেকশনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থসামাজিক বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হয়।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে। তবে এ বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে নানা প্রতিকূলতার।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রবৃদ্ধিতে অসমতা, বিনিয়োগ সংকট, সুশাসনের ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, অর্থনীতির আকারে রাজস্ব আদায় কম, বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি।
তবে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধিকে আগামী তিন বছরে ৮ দশমিক ৬ শতাংশের ঘরে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিশাল ব্যয়কে মেলাতে গিয়ে উচ্চ রাজস্ব আদায়ের হিসাবও করেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, তিনি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চান ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধিকে টেনে নিতে চান ৮ দশমিক ৬ শতাংশে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ নতুন বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে আগামী ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ১৩, ২০১৯)