গাজীপুর প্রতিনিধি : বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে একটি ঘরের ভেতর আটকে রাখা হয় ১২ বছরের শিশু সাজিদ হোসেনকে। পরে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে হাতুড়িপেটা করা হয় তাকে। হাতুড়ির আঘাতে তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তারপরও তাকে ঘরের মেঝেতেই ফেলে রাখা হয়। এরপর তার হাতের নখের ভেতর সুই ঢুকিয়ে খোঁচা দেওয়া হয়।

মোবাইল চুরির বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করতেই পিতৃহারা শিশু সাজিদের ওপর এমন পৈশাচিক নির্যাতন চালায় প্রতিবেশী কয়েকজন। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের নতুন পটকা গ্রামে ঘটে এই লোমহর্ষক ঘটনা। ভুক্তভোগী সাজিদ পাশের ডোয়াইবাড়ি গ্রামের মৃত কামাল হোসেনের ছেলে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন বছর বয়সে বাবাকে হারায় সাজিদ। পরে তার মা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে জর্ডান চলে যান। নতুন পটকা এলাকায় নানা বাড়িতে নানির কাছেই পালিত হয় সাজিদ। তবে বুধবার রাতে প্রতিবেশী রমিজ উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোন চুরি হয়। বিষয়টি নিয়ে সাজিদকে সন্দেহ করতে থাকেন আনোয়ার। এরই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন আনোয়ার। তারপর নিজের ঘরের মধ্যে আটকে রাখেন সাজিদকে। একপর্যায়ে শুরু করেন নির্যাতন। হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে থাকেন তাকে। হাতুড়ির আঘাতে মাথা ফেটে যাওয়ার পরও তার হাতের নখের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সুই। শিশু সাজিদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে ভর্তি করা হয় শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই সাজিদের খালা বোশরা বেগম বাদী হয়ে আনোয়ার, হুমায়ুন, রানা, আবুল হোসেন, সোহেল, কুদ্দুসসহ সাতজনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ করেন। তবে শুক্রবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার শিশু সাজিদ হোসেন জানায়, চুরি হওয়া মোবাইল সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই।

তবে নির্যাতনকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, বুধবার রাতে হঠাৎ দেখেন তার মোবাইল ফোন বিছানায় নেই। খোঁজ নিয়ে দেখেন তার স্ত্রীর ফোনটিও পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইল দুটি চুরির বিষয়ে সাজিদকে সন্দেহ থেকে সকালে তাকে ডেকে আনা হয়। পরে সাজিদ নিজেই হাতুড়ি দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করে।

শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগটি শুক্রবার রাতে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ১৫,২০১৯)