নিজেকে আমূল বদলে ফেলা সাকিবের গল্প
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বিশ্বকাপ শুরু হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামলেন সাকিব। গত কয়েক মাস যারা খেলার খোঁজ-খবর রাখেননি তারা নিশ্চয়ই চমকে উঠবেন। অথবা ভেবে বসবেন সাকিবের বয়স কি হঠাৎ-ই কমে গেলো কি-না? একেবারে হালকা-পাতলা গড়নের। শরীরের ওজন যে অনেক কমিয়েছেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল খালি চোখেই। ঠিক যেন, প্রথমবার যখন সাকিব খেলতে নেমেছিলেন তার বর্তমান গড়নটা রূপ নিয়েছে সেই সময়ের মতো।
বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলো শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ব্যাট হাতে ফিফটি করলেন সাকিব। দ্বিতীয় ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিলেন তিনি। টানা দুই ফিফটির একটিতেও মাঠে উদযাপন করলেন না সাকিব। ফিফটি করে তা করার কথাও নয়।
কিন্তু কার্ডিফ ও টনটনে দুই বিধ্বংসী বোলিং লাইন-আপের দল ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সাকিব এবার করে ফেললেন সেঞ্চুরিই! শেষের সেঞ্চুরিতে আবার দলের জয় নিশ্চিত করেছেন সাকিব। রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন নবজিৎ সিং সিধু, শচীন টেন্ডুলকার আর গ্রায়েম স্মিথদের। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি, ইতিহাসের পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে করলেন টানা চার ফিফটির রেকর্ডও। অথচ এসব কিছুই ছুঁয়ে গেলো না তাকে। ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন কেবল, হেলমেটটাও খুললেন না। কিন্তু কেনো?
কারণ এবারের সাকিবের ভালো করার ক্ষুধাটা বড্ড বেশি। দলকে নিয়ে তার স্বপ্নটা বিশাল। সে জন্যই এতসব ব্যক্তিগত অর্জন ছুঁয়ে যাচ্ছে না তাকে। ভালো করার তাড়না তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এবার অনেক বেশি।
নিজের শরীরের গড়ন, উদযাপনের সঙ্গে যেন বদলে গেছে সাকিবের পারফরম্যান্সও। বিশ্বসেরা অলআউন্ডারের মুকুট তো অনেক দিন আগে থেকেই পড়েছিলেন, এবারের বিশ্বকাপে দিচ্ছেন তার শ্রেষ্টত্বের প্রমাণ। আগের বিশ্বকাপে যা কিঞ্চিৎ সাকিবীয় ভঙ্গিতে দেখা যায়নি।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের বিশ্বমঞ্চে লাল-সবুজের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন সাকিব। সেবার ৮ ম্যাচে তখনকার তরুণ সাকিব করেছিলেন ৫৩,৪,২৬*,২৫,২৫,৯,৫৭*,৩ ও ০ রান। অর্থাৎ, ৮ ম্যাচে সেই বিশ্বকাপে তিনি সর্বমোট করেছিলেন ২০২ রান। আর বল হাতে ঝুলিতে পুরেছিলেন ৭ উইকেট।
এরপরের বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার ভার উঠে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কাঁধে। ততদিনে তারুণ্যে ছাপিয়ে দলের ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন সাকিব। কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপে দলের অবস্থা তথৈবচ অবস্থা, সাকিবও করতে পারলেন না সাকিবসুলভ পারফরম্যান্স। প্রথম পর্বেই বিদায় নেয়া বাংলাদেশ দলের হয়ে সাকিব ৬ ম্যাচে করেন ৫৫,১৬,৮,৩২,১ ও ৩০ রান। বোলিংয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। বল হাতে ৬ ম্যাচে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ছিলো ৮ টি।
অনেক পরিণত হয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে যান সাকিব। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ততদিনে তিন ফরম্যাটে আইসিসির শীর্ষ অলরাউন্ডার হওয়ার কৃতিত্বও দেখিয়ে ফেলেছেন তিনি। তবুও কেন যেন এই বিশ্বকাপেও সাকিব নিজেকে সেইভাবে মেলে ধরতে পারেননি। ৬ ম্যাচে এবার সাকিবের রান ১৯৬, উইকেট সংখ্যা ৮ টি।
২০০৭ বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচ, ২০১১ বিশ্বকাপে ৬ ও ২০১৫ বিশ্বকাপের ৬ ম্যাচের পারফরম্যান্সকে এবারের বিশ্বকাপে সাকিব ছাড়িয়ে গেছেন মাত্র ৪ ম্যাচ খেলেই। ব্যাট হাতে রীতিমতো অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন। ২ সেঞ্চুরি আর ২ ফিফটিতে এরইমধ্যে ৪ ম্যাচ খেলে সাকিব করে ফেলেছেন ৩৮৪ রান। বল হাতেও কম সময়টা খারাপ কাটছে না তার। নিয়েছেন, ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট।
বিশ্বকাপের আগে শারীরিক গড়ন আর নিজের উদযাপনের সঙ্গে নিজের পাফরম্যান্সও যে সাকিব বদলে ফেলেছেন তা বলা যায় কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই। এবার সাকিবের সামনে সবশেষ চ্যালেঞ্জ- নিজের মতো দলকেও আরও বদলে দিয়ে পৌঁছে দেয়া স্বপ্নের ঠিকানায়।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন২০,২০১৯)