সরকারি বরাদ্দে নিজের বাড়ির রাস্তা পাকা
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: সরকারি বরাদ্দে নিজের বাড়ির রাস্তা পাকা করেছেন হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মনির হোসেন খান। তিনি ২নং ওয়ার্ডের সদস্য। নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাস্তাটি পাকা করেছেন মনির হোসেন খান। তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়া এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন না কেউ।
এদিকে, জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের বাড়ির রাস্তা পাকা করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ সদস্য মনির হোসেন খানের বাড়ি বানিয়াচং সদর তোপখানা মহল্লায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চার লাখ টাকা বরাদ্দে বাড়ির ভেতরে পাকা রাস্তা নির্মাণ করেন তিনি। সম্প্রতি ১৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থ আরসিসি ঢালাই রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
এলাকাবাসী জানান, জেলা পরিষদ সদস্য মনির খানের বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিমের অংশে অর্থাৎ তার বাড়ির বাউন্ডারির বাইরে পাঁচ পরিবারের বসবাস। তারা চলাচল করেন উত্তর পাশের এলজিইডির রাস্তা দিয়ে। দক্ষিণে মনির খানের বাড়ি। বাড়ির আঙিনার ভেতরে নব্যনির্মিত পাকা রাস্তা দিয়ে শুধু তার পরিবারের সদস্যরা চলাচল করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার উদ্বোধন ফলকে লেখা রয়েছে ‘ফারুক মিয়ার বাড়ির সামনে থেকে তালেব হোসেন খানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা।’ তবে মনির খানের বাবার নাম তালেব হোসেন খান। কিন্তু ফলকে লেখা ফারুক নামে কারও বাড়ি নেই। প্রকল্পের নামকরণে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী প্রথমে জানতেন মনির খানের ব্যক্তিগত অর্থে রাস্তা পাকা করা হচ্ছে। পরে উদ্বোধন ফলক স্থাপনে জানতে পারেন এটি সরকারি প্রকল্প।
এলাকাবাসী জানান, এখানে চার লাখ টাকা ব্যয়ে পাকা রাস্তা করার কোনো দরকার ছিল না। মনির খান তার বাড়িকে দৃষ্টিনন্দন করতে রাস্তা করেছেন। সরকারি অর্থের অপচয় করেছেন। এতটুকু রাস্তা নির্মাণে চার লাখ টাকা বরাদ্দ। এটিও চরম দুর্নীতি।
বিষয়টি নিয়ে পার্শ্ববর্তী শেখের মহল্লা, মাদারিটুলা ও আমিরখানি মহল্লাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, দেড় বছর আগে জেলা পরিষদ সদস্য মনির খানের কাছে বেহাল রাস্তার উন্নয়নের দাবিতে লিখিত আবেদন করার পরও সুফল মেলেনি। নানা রকম টালবাহানা করে বরাবরই সময়ক্ষেপণ করেন তিনি। এবার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে বাদ দিয়ে নিজের বাড়ির ভেতরের রাস্তা পাকা করে নিলেন তিনি।
জানতে চাইলে জেলা পরিষদ সদস্য মনির হোসেন খান বলেন, আমার ব্যক্তিস্বার্থে নয়, জনকল্যাণেই রাস্তা পাকা করা হয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে কেবল আমার পরিবার নয়, আরও ৪-৫টি পরিবার চলাচল করেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নুরুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়েছি মাত্র কয়েকদিন হলো। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নেব।
হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বলেন, জেলা পরিষদ গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে থাকে জনস্বার্থে। ব্যক্তিগত উন্নয়ন করার কোনো বিধান নেই। কেউ যদি ব্যক্তিগত উন্নয়ন করে তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ২২, ২০১৯)