'মাদরাসা নয়, সাধারণ শিক্ষা থেকেই জঙ্গি হয়েছে বেশি'
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশে একটা সময় যখন জঙ্গি তৎপরতার ঘটনা নিয়মিত খবর হচ্ছিল - তখন একট কথা চালু হয়েছিল যে এই আক্রমণকারীদের একটা বড় অংশ মাদরাসায় লেখাপড়া করেছে।
কিন্তু এখন দেশটির সন্ত্রাসদমনে নিয়োজিত পুলিশই বলছে, জঙ্গীবাদে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অতীত জীবন পর্যালোচনা করে তারা দেখেছেন যে তাদের অর্ধেকেরও বেশি আসলে মাদরাসায় নয়, বরং সাধারণ স্কুল-কলেজেই পড়াশোনা করেছে। খবর বিবিসির
বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, জঙ্গীবাদে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ৫৬ শতাংশ আসছে সাধারণ শিক্ষা থেকে এবং ২২ শতাংশ মাদরাসা শিক্ষা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে।
যারা বাংলাদেশের জঙ্গি কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেন - তারা বলছেন, 'জঙ্গি রিক্রুটকারীরা' এমন লোকদেরই রিক্রুট করে যারা সাধারণ শিক্ষায় পড়ালেখা করেছে এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে।
পুলিশ বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তারা জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, এবং এসব ব্যক্তিদের অতীত জীবন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তারা।
এতে তারা দেখেছেন, এদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ রয়েছে যারা সাধারণ শিক্ষা অর্থাৎ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন।
অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. মনিরুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ রয়েছে মাদরাসা শিক্ষায় পড়াশোনা করা ব্যক্তি। তারা যে শুধুই মাদরাসা শিক্ষা থেকে এসেছে এমন নয়। "
অ্যান্টি-টেরোরিজম পুলিশের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাকি ২২ শতাংশ যারা রয়েছে তারা হয় অশিক্ষিত নয়ত ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ২০১৬ সালে গুলশানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর হামলাকারীদের পরিচয় জেনে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন।
কারণ তাদের বেশিরভাগই ছিল ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কারো কারো পারিবারিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত সচ্ছল।
এর আগে পর্যন্ত জঙ্গিবাদ সম্পর্কে অনেকসময়ই গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে যারা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে - তাদের বেশিরভাগের 'ব্যাকগ্রাউন্ড' মাদরাসা শিক্ষার।
জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশে ১৯৮০-র দশকের দিকে যেসব জঙ্গি তৎপরতা ছিল সেটা মাদরাসাকেন্দ্রিক ছিল।
কিন্তু আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, সিরিয়া-ইরাকে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর উত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে জঙ্গি রিক্রুটকারীরা সাধারণ শিক্ষায় পড়ালেখা করা এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে - এমন ব্যক্তিদেরই রিক্রুট করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিষয়ক বিভাগের শিক্ষক খন্দকার ফারজানা রহমান বলছিলেন, সাধারণ শিক্ষা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে গত ১০ বছরে তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করেন নুর খান লিটন। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশে জেএমবির সদস্যের মধ্যেই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা ছিল। - যেটা উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, "হরকাতুল জিহাদের মতো সংগঠনে মাদরাসা ছাত্রের বাইরে কেউ ছিল না। কিন্তু জেএমবিতে মাদরাসার পাশাপাশি পলিটেকনিক এবং সাধারণ শিক্ষা থেকে আসা লোকও ছিল। কিন্তু তার পরে নব্য-জেএমবি এবং আইএসের সময়কালটা দেখেন - সেখানে কিন্তু সাধারণ শিক্ষা থেকে আসা লোক বেশি।"
"এটা এই কারণে বিপজ্জনক যে আগে ধারণা ছিল - সমাজের অবহেলিত অংশ এবং পশ্চাৎপদ মাদরাসা শিক্ষা থেকেই জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে, কিন্তু আজকে আর এ কথা বলার সুযোগ নেই" - বলেন মি. খান।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ২৩,২০১৯)