নুসরাত হত্যামামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু
ফেনী প্রতিনিধি: ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিন মামলার বাদী নুসরাতের বড়োভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
আদালতের সময়ের মধ্যে বাদীর সাক্ষ্য শেষ না হওয়ায় পরবর্তী অংশ আগামী ৩০ জুলাই ধার্য তারিখে নেওয়া হবে বলে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহমেদ জানিয়েছেন।
পিপি হাফেজ আহমেদ বলেন, বেলা ১১টায় সকল আসামিকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।
সোয়া ১১টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ চলে।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেন বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ১৬ আসামির মধ্যে নয় আসামির আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেন।
মামলার প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) সিরাজ উদ-দৌলার পক্ষে বাদীকে জেরা করেন আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন খাঁন নয়ন।
আরেক আসামি সোনাগাজী উপেজলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবসার উদ্দিনের পক্ষে বাদীকে জেরা করেন আইনজীবী কামরুল হাসান।
এছাড়া চার আসামির পক্ষে আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, অপর এক আসামির পক্ষে আইনজীবী মাহফুজুল হক বাদীকে জেরা করেন।
বাদীর আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তার মক্কেলকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা, এজাহার, আসামির ডায়িং ডিক্লারেশন, নুসরাতের সাথে আসামিদের বিরোধ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সাথে আসামিদের বিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে মামলার বাদীকে টানা সাড়ে ৩ ঘণ্টা জেরা করেন।
আদালতের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সাত আসামির পক্ষে বাদীকে জেরা করার জন্য আদালত আগামী ৩০ জুন নির্ধারণ করে দিয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বাদী ছাড়াও নুসরাতের বান্ধবি নিশাত ও নুসরাতের সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফূর্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করার কথা থাকলেও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। তাদের সাক্ষ্যও আগামী ৩০ জুন হবে।
আসামিপক্ষের এক আইনজীবী আহাসান কবির বেঙ্গল বলেন, প্রত্যেক আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আদালতে জামিন আবেদন করলেও আদালতের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় জামিন শুনানি হয়নি। আগামী ৩০ জুন জামিন শুনানি হবে বলে আদালত জানিয়েছেন।
গত ৬ এপ্রিল ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে মাদ্রাসা সংলগ্ন সাইক্লোন সেল্টারের ছাদে একদল লোক তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাতের মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে ৭ এপ্রিল নুসরাত চিকিৎসকদের কাছে দেওয়া শেষ জবানবন্দিতে (ডায়িং ডিক্লেরেশন) বলেছিলেন, ‘নেকাব, বোরখা ও হাতমোজা পরা পাঁচজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।’
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান গত ৮ এপ্রিল ওই সময়ের মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় ২১ জনকে আটক করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা, মাদ্রাসার ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক আবসার উদ্দিন, ওই মাদ্রাসা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, ওই মাদ্রাসা ছাত্রদলের সভাপতি নূর উদ্দিন, সোনাগাজী উপেজলা আওয়ামী লীগের সভাপিত রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, অধ্যক্ষের ভাগ্নি ও আলিম পরীক্ষার্থী উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পাসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
১৬ আসামির মধ্যে মামলার এজাহারনামীয় আটজন এবং এজাহারবহির্ভূত আটজন আসামি রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে ১২ জন আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ২৮, ২০১৯)