আগের রাতে ম্যাসেঞ্জারে হত্যার নির্দেশনা
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2019/06/28/Rifat9.jpg)
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মিশন পরিচালনা করেছে 007 নামের একটি গ্রুপ। এই গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছিল জেমস বন্ড সিরিজের 007 নামের সাথে মিল রেখে। বন্ড গ্রুপের প্রধান হিসেবে নয়ন বন্ড এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে রিফাত ফরায়েজী গ্রুপটি পরিচালনা করতো। এদের ফেসবুকভিত্তিক একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে রিফাত শরীফকে হত্যা পরিকল্পনার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা সম্বলিত কয়েকটি স্ক্রিনশট এই প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে।
এতে দেখা যায়, ঘাতক রিফাত ফরায়েজী আগের দিন রাত আটটার দিকে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে 007 গ্রুপের সদস্যদের সরকারি কলেজের সামনে থাকার নির্দেশ দেয়। এ সময় নামের প্রথমে Mohammad লেখা একজন ও সাগর নামের আরেকজন জানতে চায় তারা কোথায় থাকবে। রিফাত ফরাজী তাদেরকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সকাল ৯টায় থাকতে বলে। রিফাত গ্রুপে দা’য়ের ছবি দিয়ে বলে, ‘পারলে এইটা নিয়া থাইকো’। Mohammad জবাবে ‘দা নিয়ে থাকবো’ বলে জানায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নয়নের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে 007 নামে একটি গ্যাং গ্রুপ কলেজ রোড, ডিকেপি, দীঘির পাড়, কেজি স্কুল ও ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে আসছে। গ্রুপের সদস্যরা 007 কে সংকেত ব্যবহার করত। ঘাতক নয়নের মোটরসাইকেলের গায়ে ও বাড়ির দেয়ালে 007 বন্ড লেখা থাকতো।
এই গ্রুপ কেজি স্কুল, ক্রোক ও ধানসিঁড়ি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়। বিশেষ করে পলিট্যাকনিক কলেজে অধ্যায়নরত ছাত্রদের মেসে এরা প্রায় সময়ই হানা দিয়ে মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া, টাকা পয়সা আদায় করতো এবং ছিনতাই করতো। ধানসিঁড়ি এলাকায় একসাথে ঘুরতে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের অপদস্ত করে টাকা আদায় করতো। ঘুরতে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের বেশ কয়েকজনকে তারা মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে রাকিব নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে জখম করে। পরের বছর ক্রোক এলাকার ফারুক পিয়াদার ছেলে জীবনকে কুপিয়ে জখম করে। এ ধরনের বেশকিছু ঘটনার সাথে এই 007 গ্রুপের সম্পৃক্ততা ছিল। এসব কাজে নয়ন সরাসরি অংশ না নিলেও তার নির্দেশনায় রিফাত ফরাজীর নেতৃত্বে গ্রুপটির সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতো। আর গ্রুপের নেতা নয়ন বন্ড মূলত মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সাথেও গ্রুপটির সম্পৃক্ততা ছিল।
২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নয়ন। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে। তার বিরুদ্ধে বরগুনা সদর থানায় আটটি মামলা রয়েছে।
ক্রোক এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, গত বছরের শেষ দিকে দীঘির পাড়ের একটি মেসে হানা দিয়ে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয় এই গ্রুপের সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে ১৫ জন ছাত্র ভয়ে মেস ছেড়ে চলে যায়।
কেজি স্কুল এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চুরি, ছিনতাই, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা এই 007 বাহিনী করেনি।’
ক্রোক স্লুইজ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত বছর জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষ এই গ্রুপকে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করে। নয়ন ও অন্যরা আমার ওপর হামলা করে। আমি এর বিচার পাইনি।’
এলাকার কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম নান্না বলেন, ‘ছাত্রদের মেস থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনার বিচারের জন্য রিফাত ফরাজীকে ডেকে পাঠানোয় রিফাত ফরাজী তার বাবা দুলাল ফরাজীর সামনেই আমার ওপর হামলার চেষ্টা করে। আমি তৎকালীন পুলিশ সুপার ও সব রাজনৈতিক নেতার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হয়নি।’
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ২৮, ২০১৯)