বরগুনা প্রতিনিধি: ‘বিয়ের আগে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রেম এবং বিয়ের প্রস্তাব দিত নয়ন। বিষয়টি মিন্নি বেশ কয়েকবার জানায় পরিবারের সদস্যদের। একবার মিন্নির ঘাড়ে রামদা ঠেকিয়ে তাকে হত্যারও হুমকি দেয় নয়ন।’

শুক্রবার বরগুনায় নয়াকাটা মাইঠা এলাকায় মিন্নির চাচা মো. আবু সালেহ এ তথ্য জানান।

মিন্নির চাচা মো. আবু সালেহ জানান, প্রায় ১ বছর ধরে মিন্নিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড। প্রেম এবং বিয়ের প্রস্তাব দিত তাকে। বিষয়টি মিন্নি বেশ কয়েকবার জানায় পরিবারের সদস্যদের। একবার নাকি মিন্নির ঘাড়ে রামদা ঠেকিয়ে তাকে হত্যারও হুমকি দেয় নয়ন।

এরপর আমরা তাড়াতাড়ি করে মিন্নিকে রিফাত শরীফের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে দিই। ভেবেছিলাম বিয়ের পর আর নয়ন তাকে বিরক্ত করবে না। কিন্তু তারপরও এতবড় ঘটনা ঘটে গেল। বর্তমানে মিন্নি ও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যে কারণে আমাদের বাড়িতে পুলিশ প্রহরা দেয়া হয়েছে।

এদিকে রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনার পর থেকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গ্রামের বাড়ি বরগুনার নয়াকাটা মাইঠা এলাকার বাসায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মোতায়েন হয়েছে পুলিশ। বরগুনা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৪ জন অস্ত্রধারী পুলিশ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে মিন্নির বাড়ি।

এদিকে নিহত রিফাত শরীফের বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মেলে কবরের নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে সন্তানহারা মায়ের ডুকরে কেঁদে ওঠা আর বিলাপের আহাজারি ছাড়া সবকিছুই চুপচাপ।

প্রসঙ্গত, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত।

কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে তারা।

রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবার জানায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় অংশ নেয় নয়ন বন্ডসহ ৪-৫ জন। রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে পুলিশলাইন সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকে।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ২৯,২০১৯)