বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে শাহনেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলো- তানভীর, মো. সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন। এর আগে সন্দেহভাজন মো. নাজমুল হাসান ও এজাহারে নাম থাকা চন্দন ও মো. হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হলো।

রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে বরগুনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এসব তথ্য জানান।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসামি ধরা ঘণ্টাব্যাপী বা সেকেন্ডব্যাপী হয় না। টেকনিক্যাল অনেক বিষয় আছে? আসামি কোথায় আছে না আছে? কখন নক করলে আসামিকে আমি সুবিধাজনকভাবে ধরতে পারবো, নাকি আসামি পালিয়ে যাবে; এরকম অনেক বিষয় থাকে। তার মানে এটা না যে এত ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আসামি ধরলাম না, বা আসামি আমাদের নজরদারির বাইরে চলে গেছে বা আমাদের গাফিলতি আছে। বিষয়টি তা নয়, আমরা রাতদিন বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমার আস্থা আছে, আমার টিমের প্রতি, আমার কাজের প্রতি, তাই আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি; আমরা শিগগিরই আসামি ধরতো পারবো।’

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কতজনকে আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে এসপি বলেন, ‘এটা এই মুহুর্তে বলা যাবে না, কারণ অনেকেই গোপনে আমাদের কাছে এসে ইনফরমেশন দিচ্ছেন। আবার অনেককেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনছি, এই বিষয়টি আপাতত গোপন থাক।’

এসময় তিনি পুলিশ কনস্টেবল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রিফাত হত্যায় পরিকল্পনাকারী গ্রুপের সদস্য সাগরের বিষয়ে বলেন, ‘সে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু, আমরা যখন জানতে পারি, এই গ্রুপে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তখনই তাকে গ্রেফতার করি। মিডিয়ায় এসেছে আজকে, কিন্তু আমরা তাকে আগেই গ্রেফতার করেছি। শনিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাতে বরিশালের নানার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।’

বুধবার (২৬ জুন) বরগুনা কলেজের ভেতর থেকে রিফাত শরীফকে বের করে এনে কলেজের সামনের রাস্তায় কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। এ সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ঘাতকদের বাধা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তবে এক ঘাতককে আটকে রাখলে অন্য ঘাতক উপর্যুপরি কোপাতে থাকায় তার সে চেষ্টা বিফলে যায়। সন্ত্রাসীদের মধ্যে রিফাত ফরাজীর হাত থেকে রামদা খসে পড়ে গেলে তারা হামলা থামিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর গুরুতর আহত রিফাত শরীফকে রিকশায় তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান মিন্নি। এ ঘটনার সময় আশেপাশে শত শত লোক জড়ো হলেও নয়ন বন্ডের সহযোগীরা চারপাশে ছড়িয়ে থাকায় কেউ তাদের আটকানোর সাহস করেনি। তবে হামলাকারীদেরই একজন রিশান ফরাজী চাইছিল রিফাত শরীফকে যেন প্রাণে মারা না হয়। এজন্য নয়ন বন্ডকে সেও আটকানোর চেষ্টা করে। নয়নের রামদা’র দু-একটি আঘাত তার শরীরেও লাগে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় সেও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় মোবাইল ফোনে দূর থেকে ধারণ করা একাধিক ভিডিও ফুটেজে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ১২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন তার বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ। এ মামলার আসামিরা হলো- ক্রম অনুযায়ী সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড) (২৫), মো. রিফাত ফরাজী (২৩), মো. রিশান ফরাজী (২০), চন্দন (২১), মো. মুসা, মো. রাব্বি আকন (১৯), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রায়হান (১৯), মো. হাসান (১৯), রিফাত (২০), অলি (২২) ও টিকটক হৃদয় (২১)। বাকি পাঁচ থেকে ছয় জন অজ্ঞাত আসামি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ৩০, ২০১৯)