বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যার একটি সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে এসেছে। ফুটেজটি এখন বরগুনার সর্বত্রই আলেচিত হচ্ছে।

কারণ, ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা ছাড়াও আরো অনেককে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে সন্দেহভাজন এখনো পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা ছাড়াও আরো অনেককে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা গেছে।

এই সিসিটিভি ফুটেজটিতে রিফাত হত্যাকাণ্ডে অন্তত ২০ জনের বেশি অংশ নিতে দেখা যায়। এর মধ্যে ঘটনার প্রথম দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে রিফাতের কলার ধরে রিফাত ফরাজি ও রায়হান। ঠিক এই সময়ে রিফাতের ছোটভাই রিশান দু হাত আগলে জাপটে ধরে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। আর পেছনে তানভীর, মোহাইমিন, টিকটক হৃদয়, রাব্বি ও ব্যাগ নাইমসহ অন্তত ১০ থেকে ১২ জন একযোগে সামনে এগিয়ে যায়। মাত্র ১০ গজ দূরেই দাঁড়ানো নয়ন বন্ডের সামনে আনা হলে প্রথমে রিফাতের গায়ে ঘুষি দেয় নাইম। ঠিক ওই মুহূর্তে নয়ন ও অন্যরা এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। এ সময় তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল আরো ৭ থেকে ৮ জন। নয়নের সামনে ছেড়ে দিয়েই রিফাত ফরাজী ও তানভীর দৌড়ে কলেজের পূর্ব পাশের সীমানা দেয়ালের পরের গলিতে চলে যায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে উভয়ে ফিরে আসে। এদিকে রিফাত শরীফকে অন্যরা মারধর করতে থাকে ও রিশান রিফাতের কোমর ধরে টেনে দেয়ালের পাশে নিয়ে যায়। মুহূর্তেই রিফাত ফরাজী রামদা দিয়ে কোপাতে শুরু করে ও নয়নের হাতে অপর একটি রামদা তুলে দেয়। দুজনে এলোপাতাড়ি কোপানোর সময় মিন্নি কখনো নয়ন আবার কখনো রিফাত ফরাজীকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করে। নয়নকে বাধা দেওয়ার সুযোগে রিফাত ফরাজী কোপাতে থাকে, আর রিফাতকে বাধা দেওয়ার সময় নয়ন। কোপানোর সময় রিশান, রাব্বি আকন ও তানভীর ঘিরে রাখে রিফাত শরীফকে, যাতে দৌড়ে পালাতে না পারে। এ সময় অন্যরা আশপাশে দাঁড়িয়ে কোপানোর দৃশ্য দেখতে থাকে। মাত্র দু’ মিনিটে মিশন শেষ করে যে যার মত চলে যায়।

রিফাত হত্যায় এজাহারভুক্ত ২ নম্বর রিফাত ফরাজী, ৪ নম্বর আসামি চন্দন, ৯ নম্বর আসামি হাসান, ১১ নম্বর অলি, ও ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। মামলার ৩ নম্বর আসামি রিশান ফরাজী, ৫ নম্বর আসামি মুছা বন্ড, ৬ নম্বর আসামি রাব্বি আকন, ৭ নম্বর আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, ৮ নম্বর আসামি রায়হান এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।

এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুসারে কামরুল হাসান সাইমুন, সাগর, তানভীর ও রাফিউল ইসলাম রাব্বি নামের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর বাইরেও ভিডিও ফুটেজে নতুন করে আরো অনেককে অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে এদের অনেকেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। বিশেষ করে বরগুনা সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত নাইম নামের একজন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত ছিল। এই নাইমকেই প্রথমে রিফাত শরীফের শরীরে আঘাত করতে দেখা যায়। কিন্ত সে মামলার আসামিও হয়নি, সন্দেহভাজন হিসেবে আটকও হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য ও মামলার এজাহারে অনেক মিল রয়েছে, আমরা এজাহারভুক্তই শুধু নয়, এ ঘটনায় জড়িত সবশেষ ব্যক্তিটিকে আইনের আওতায় আনব।’

এজাহারভুক্ত অনেকেই গেপ্তার না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের নজরদারির বাইরে কেউ নেই, আমরা মূলত সব আসামিদের গ্রেপ্তারের স্বার্থেই একটু সময় নিচ্ছি।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ০৮,২০১৯)