'ব্যভিচার’ সংক্রান্ত ৪৯৭ ধারা কেন সংশোধন নয়: হাইকোর্ট
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘ব্যভিচার’ সংক্রান্ত দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এবং ধারাটি কেন সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
ধারাটি সংশোধন চেয়ে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং বিভাগের সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।
দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় ‘ব্যভিচার’ এর বিষয়ে বলা হয়েছে, “যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির স্ত্রী অথবা যাকে সে অপর কোন ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে এমন কোন ব্যক্তির সহিত উক্ত অপর ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ব্যতীত এইরূপ যৌন সঙ্গম করে যা নারী ধর্ষণের সামিল নহে, তবে সেই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধের জন্য দোষী হবে। তাকে ৫ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডে, উভয়দণ্ড দণ্ডিত করা যাবে। অনুরূপ ক্ষেত্রে স্ত্রী লোকটি দুষ্কর্মের সহায়তাকারী হিসেবে দণ্ডিত হবেন না।”
এবিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসান চ্যানেল আই অনলাইকে বলেন: দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী কারো স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে, যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবে, শুধু সেই (পুরুষ) ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। অথচ স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর কিছুই করার নেই।
আবার স্বামী বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে বা যার (অন্য নারীর) সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।
এছাড়া স্বামী যদি কোনো বিধবা বা অবিবাহিত নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কিংবা কোন স্ত্রী যদি স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান তা আইনত বৈধতা রয়েছে এই আইনে।
আইনজীবী ইশরাত হাসান আরও বলেন: দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় যে বিষয়গুলো রয়েছে তা সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটা একটা অদ্ভুত ও বৈষম্যমূলক ধারা। এবং এই ধারাটির কারণে কেউ ইতিবাচক প্রতিকার পাচ্ছে না। সর্বোপরি এ ধারাটি চরম বৈষম্যমূলক এবং নারীদের জন্য অপমানজনক।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাটি সংশোধনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ রুল জারি করলেন।
এর আগে গত বছর ভারতের কেরালার এক বাসিন্দা তাদের দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাটি বাতিলের আবেদনের করেন। সে আবেদনের শুনানিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘একটি সম্পর্কে দুজন জড়িত হলে তাঁদের মধ্যে পুরুষ মানুষটির সাজা হবে, আর নারীর সাজা হবে না, এটা অনুচিত।’
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ০৮,২০১৯)