সংসদীয় বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের শুভ সূচনা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আর বাংলাদেশ সংসদীয় দলের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় আয়োজনের খুব প্রশংসা করলেন। বললেন, ভালো উদ্যোগ, আয়োজন-ব্যবস্থাপনাও বেশ চমৎকার। তারা উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই পারেন। কেননা বিশ্বকাপের মধ্যে প্রতিযোগী দেশগুলোর সংসদ সদস্যরা প্রথমবারের মত ব্যাট ও বল হাতে মাঠে এবং তাও কোনো প্রদর্শনী ম্যাচে নয়, একদম প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট তো সাধুবাদ পাবেই।
গতকাল সে প্রতিযোগীতার প্রথম দিন পাকিস্তানকে ১২ রানে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে বাংলাদেশ সংসদীয় ক্রিকেট দল। তবে আয়োজনের আনুসাঙ্গিক দিক বিশেষ করে মাঠ নির্বাচন, সংসদ সদস্যের বাইরে ক্রিকেটার খেলানো এবং আম্পায়ারিং ও সাদা বলে সাদা সাইটস্কিনে খেলা আয়োজন প্রশ্ন জাগায় বৈকি।
নাম ‘পার্লামেন্টারি ওয়ার্ল্ডকাপ'! বাংলাদেশ, ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিন আফ্রিকা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সব সংসদ সদস্যরা অংশ নেবেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হয়েছে খুব বড়সড় আয়োজন বুঝি। ভাবা হচ্ছিল লর্ডস-ওভালের মত বিশ্ব মানের ভেন্যুতে না হোক, অন্তত লন্ডন শহরের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট ভেন্যু কিংবা কোনো ক্রিকেট ক্লাবের মাঠে বুঝি খেলা হবে।
কিন্তু যে মাঠে খেলা হলো সেটা হলো লন্ডনের উপকন্ঠে চিসউইক বার্লিংটন গার্ডেন’ সংলগ্ন। যা পূর্ব লন্ডন, মধ্য লন্ডন থেকে বেশ দূরে। হোয়াইট চ্যাপেল-স্টেফেনি গার্ডেনসহ পূর্ব লন্ডন থেকে পাতাল রেলেও প্রায় এক ঘণ্টার পথ। টিউবে অন্তত ২০টি স্টেশন পার হয়ে যেতে হয়। তারপরও নিকটবর্তী টিউব স্টেশন থেকে আরও ২০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ।
আর যে মাঠে খেলা হলো, সেটা আসলে কোন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট ভেন্যুও না। লন্ডনের প্রান কেন্দ্র থেকে বেশ দূরে। ঠিক ঢাকার পূর্বাচলের ‘জিন্দা পার্কের ’ আদলে গড়া বিশাল এক বাগান। ফুল-ফলের গাছ আর হ্রদের মিশেলে এক অপূর্ব সুন্দর জায়গা। ঢাকার জিন্দা পার্কের চেয়ে আকার-আয়তনে অন্তত কয়েকগুন বড়। সেই সঙ্গে অনিন্দ সুন্দর এক হ্রদ বয়ে গেছে পুরো পার্কের সাথে। তারই এক কোণে ক্রিকেট মাঠ।
এমনকি চিসউইক গার্ডেনে ঘুরতে যাওয়া বেশির ভাগ মানুষই জানেন না এখানে একটি ক্রিকেট ভেন্যু আছে। ক্রিকেট মাঠ এই দিকে কিংবা ওইদিকে এমন কথাও লিখা নেই। এমনকি তীর চিহ্ন পর্যন্ত আঁকা নেই।
যদিও মাঠটা বেশ সুন্দর। সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত আউটফিল্ড। আকার-আয়তনও বড়। কিন্তু মাঠে ঢুকেই যে কেউ সবার আগে বিস্মিত হবেন সাইটস্ক্রিন দেখে। রঙিন পোশাক পড়ে খেলছে দুই দল। সাদা বলে খেলা হচ্ছে। তবে সাইটস্ক্রিন কালো নয়, ‘সাদা। ’ এটাই শেষ নয় , মাঠে ঢুকেই চোখে পড়লো পাকিস্তান সংসদীয় দলের হয়ে কজন অল্প বয়সী ক্রিকেটার!
বাংলাদেশের সংসদীয় দলের ক্রিকেটারদের ব্যাট থেকে স্ট্রোকগুলো রুখে দিচ্ছেন, কখনো বলের পিছন পিছন ছুটে, না হয় শরীর মাটিতে ফেলে। ঠিক পেশাদার ক্রিকেটারদের মত। দেখেই বোঝা গেল তারা সংসদ সদস্য নন।
পরে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় কথা প্রসঙ্গে জানালেন, পাকিস্তানের অর্ধেক ক্রিকেটারই সংসদ সদস্য নন। তাই আমরাও সংসদ সদস্য ছাড়া কয়েকজন ক্রিকেটার নিয়ে নেমেছি। লাল সবুজ জার্সি গায়ে দেখা মিললো এনামুল জুনিয়রের। দেশের প্রথম টেস্ট জয়ের অন্যতম নায়ক এ বাঁহাতি স্পিনার স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেট খেলতেই এখন লন্ডনে। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান দলের প্রায় অর্ধেক সংসদ সদস্যর বাইরে ক্রিকেটার থাকায় অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় এনামুল জুনিরয়রকে দলে নিয়েছেন।
দুর্জয় তা জানালেন, শেষ মুহুর্তে দু-একজন ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তি ঘটলেও বাংলাদেশ সংসদীয় দল মাঠে নেমেছে পুরদস্তুর দল হিসেবে। ঢাকা থেকে বিসিবির নিজস্ব কোচ দিপু রায় চৌধুরী আর এহসান আছেন প্রশিক্ষক হিসেবে। ফিজিও আর ট্রেনারও এসেছেন।
এদিকে আগে ব্যাট করতে করা বাংলাদেশের হয়ে দলের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় আম্পায়ারের ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে ফিরে আসলেন ৪ রান করে। চার নম্বরে উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে পুল করে ডিপ স্কোয়ার লেগ আর ডিপ মিড উইকেটের মাঝখান দিয়ে বাউন্ডারি হাকানো দুর্জয় পরের বলে অনসাইডে ঘোরাতে যান কব্জির মোচরে। বল লেগস্টাম্পের বাইরে পড়ে ভিতরে ঢুকছিল। দুর্জয় ছিলেন অনেকটা সামনে।
পেশাদার ক্রিকেটাররা হলে হয়ত আবেদনই করতেন না। কিন্তু পাকিস্তানের বোলার আবেদন করলেন। দুর্জয় এবং বাংলাদেশ দলও সমর্থকদের অবাক করে আম্পায়ারও আঙুল তুলে দিলেন !
অধিনায়ক আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হলেও বাংলাদেশ সংসদীয় দলের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় বল হাতে স্পিন ভেলকিতে পাকিস্তানিদের বেসামাল করে ছাড়েন। দুর্জয়ের অফস্পিনে আউট হন তিন পাকিস্তানি ক্রিকেটার।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সংসদীয় দলের ১২ রানের জয়ের নায়কও অধিনায়ক দুর্জয়। এছাড়া বাংলাদেশের সংসদ সদস্যর মধ্যে ব্যাট হাতে নেমে নজর কাড়লেন বাগেরহাট-২‘র শেখ তন্ময়। কভার ড্রাইভে এক দৃষ্টি নন্দন বাউন্ডারি হাঁকানো তন্ময়ের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান।
বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন আর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল না খেললেও বাংলাদেশ ডাগ আউটের মধ্যমণি হয়েই ছিলেন। তবে খেলোয়াড় তালিকায় নাম থাকলেও আজ প্রথম ম্যাচে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আর তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ পলক খেলেননি। তাদের মাঠেও দেখা যায়নি।
এদিকে খেলা দেখতে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমাগমও ছিল বেশ। সঙ্গে টাইগার শোয়েব আর টাইগার মিলনও বাঘের পোশাক পড়ে আর লাল সবুজ জাতীয় পতাকা হাতে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ, টাইগার-টাইগার’ স্লোগান তুলে মাঠ গরম করে রাখলেন। এছাড়া মোহাম্মদআশরাফুলের দেখাও মিললো। সংসদীয় দলের খেলা দেখতেই মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন আশরাফুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ সংসদীয় দল : ১৩৫/৫; রায়হান ৩৬, মারুফ ৩২, শিয়ান ১৬, তন্ময় ১৫, বাপ্পি ১৩, মনির ৮ ও দুর্জয় ৪।
পাকিস্তান সংসদীয় দল : ১২৩; জাফর ৩৯, নাইমুর রহমান দুর্জয় ৩/১১ । বাপ্পি , এনামুল ও ইমান একটি করে উইকেট।
ফলঃ বাংলাদেশ ১২ রানে জয়ী।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ১১,২০১৯)