নেত্রকোণার তিনশতাধিক গ্রাম প্লাবিত
নেত্রকোণা প্রতিনিধি: টানা চারদিনের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার তিন উপজেলা কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টায় ২৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় তিন উপজেলায় অন্তত আড়াই শতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। গ্রামীন বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে থাকায় উপজেলা ও জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
শনিবার নেত্রকোণার জারিয়া পয়েন্টের কংস নদের পানির গজ রিডার আলমগীর হোসেন জানান, সকাল ৯টার দিকে কংস নদের পানি বিপৎসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার ও কলমাকান্দার উব্দা খালি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাতে জেলার প্রধান নদী কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিতে পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। বন্যায় কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়ন বড়খাপন, রংছাতি, লেঙ্গুরা, খারনৈ, নাজিরপুর, পোগলা, কৈলাটি ও সদর দুর্গাপুর উপজেলার গাওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, বাকলজোড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরির আংশিক এলাকা এবং বারহাট্টার রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এতে করে অন্তত ৩৫ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। কলমাকান্দার পাঁচগাও, লেঙ্গুরা, বড়খাপন, পাগলা, চারালকোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীন বাজার পানির নিচে রয়েছে।
এদিকে বড়খাপন, চানপুর, ধিতপুর, পাঁচকাঠা, পালপাড়া, কলেজ রোডসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীন পাকাসড়ক পানির নিচে থাকায় মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারে পানি প্রবেশ করে মাছ ভেসে গেছে। দুর্গাপুরে বিরিশিরি ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ১৯৬টি পরিবার ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তত ১৫২টি বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সংযোগ সড়ক ডুবে যাওয়ায় ১২টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, বন্যা কবলিতি এলাকায় ২০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে দুর্গাপুরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, ওই উপজেলার ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক তালুকদার বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কলমাকান্দায় দুই শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ওই এলাকার জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছি।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম বলেন, পাঁচটি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। যাদের বসত ঘরে পানি ঢুকছে তাদেরকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বারহাট্টার রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজু জানান, রায়পুর ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। মৎস্য খামার, পুকুর, রোপা আমনের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার দিনভর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিনকে নিয়ে প্লাবিত এলাকা ঘুরে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বারহাট্টার ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বন্যায় রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, কংস, উব্দাখালি, সোমেশ্বরীসহ বেশ কয়েকটি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কিছুটা ওপরে রয়েছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে পানি কমে যাবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার জন্য আপাতত ২২ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই দুই উপজেলায় ৬০০ প্যাকেট শুকনো খবার (ছিড়া, গুড়, বিস্কুট) সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ১
,২০১৯)