গ্রাহকের জমার শত কোটি টাকা কানাডায় পাচার করলেন চেয়ারম্যান
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সাধারণ গ্রাহকের জমার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং শত কোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছেন আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই সমবায় সমিতিকে ব্যাংক হিসেবে প্রচার করে লভ্যাংশের ফাঁদে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি। লভ্যাংশ তো দূরের কথা আসলই পরিশোধ করেনি। কাডানায় থাকা দুই ছেলের নামে আত্মসাতের টাকা পাচার করেছেন তাজুল ইসলাম।
গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ এবং কানাডায় টাকা পাচারের অভিযোগে গত শুক্রবার (১২ জুলাই) ডিএমপির রমনা থানায় একটি মামলা করেছে সিআইডি। মামলা নং- ২১। এ মামলায় তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ তিন সন্তানকে আসামি করা হয়েছে। একই ধারায় গত ২৫ মে বংশাল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। মামলা নং-৪৩।
বংশাল থানার মামলায় গত ১০ জুলাই মতিঝিল এলাকা থেকে প্রধান আসামি এম তাজুল ইসলামকে (৬৯) গ্রেফতার করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
রোববার দুপুরে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম ১৯৮৪ সালে শুরু হয়। তাজুল ইসলাম ১৯৮৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি ব্যাংকটির ইনভেস্টমেন্ট শাখার প্রধান ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটিতে যুক্ত হয়ে সাধারণ গ্রাহকদের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায়ের পর তা আত্মসাৎ করেন।
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সারাদেশে ২৬টি শাখার অনুমোদন থাকলেও ১৬০টি শাখা পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৮০টি শাখার ১১ হাজার ৪২৫ (৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত) গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আমানত গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎ করা হয়।
আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটির চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম ৮০টি শাখার ব্যবস্থাপক ও ২য় কর্মকর্তারা গ্রাহকদের অধিকহারে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে নগদ আমানত সংগ্রহ করেন। জমা টাকার মেয়াদ পূর্তিতে গ্রাহকরা আসল টাকা ও লভ্যাংশ ফেরত চাইতে গেলে কালক্ষেপণ ও নানাভাবে টালবাহানা করে আসছিলেন।
তাজুল ইসলাম এবং শাখা ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন চৌধুরী সংঘবদ্ধভাবে ১২টি বিভিন্ন তফসিলভুক্ত ব্যাংকে ৭৭টি হিসাবের মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।
ব্যাংকের হিসাব বিবরণী এবং স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাজুল ইসলাম ও জাকির হোসেনসহ অন্যান্য আসামি গ্রাহকদের জমার ৩০০ কোটি টাকা নগদ ও অনলাইনে ট্রান্সফার করে পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করেন। এ টাকা তাজুল ইসলামের নিজের নামে, স্ত্রী আফরোজা পারভীন এবং ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরের পরিচালিত সাউদি বাংলা প্রপার্টিজ লিমিটেড, তানভীর এন্টারপ্রাইজ, তানভীর অটো ব্রিক লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
তাজুলের বড় ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যদের নামে চেক ইস্যু, ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান ও সাবেক সদস্য এবং কর্মকর্তার যোগসাজশে নগদ উত্তোলনের পর তা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যাংকে প্রেরণ, স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে হস্তান্তর করেছে বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।
মোল্যা নজরুল বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিবিরোধী। মিথ্যা প্রলোভনে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে আমানত সংগ্রহের পর জমার অর্থ আত্মসাৎ করে জমি, ফ্ল্যাট, নামে বেনামে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চালু এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার আঁটি মৌজায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে আজিজ কো-অপারেটিভ মুক্তিসরণি শপিংমল/টাওয়ারের নামে ৬০ শতাংশ জমিতে বহুতল ভবন স্থাপন এবং টাকা স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন।
এম তাজুল ইসলাম, ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীর, প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই মামলায় তাজুল ইসলামের কানাডায় বসবাসরত দুই ছেলেকেও আসামি করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সিআইডি জানায়, এম তাজুল ইসলাম কানাডার গ্রিন কার্ডধারী এবং তার ছেলে ফারহাদুল ইসলাম ছাব্বির ও রিয়াজুল ইসলাম রিজভী ২০১১ সাল থেকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
তাজুল ইসলাম সাধারণ গ্রাহকের জমার আমানত থেকে শত কোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছেন, যেখানে তার ওই দুই ছেলেও জড়িত।
সমবায় অধিদফতরের স্মারক নং-৪৭.৬১.০০০০.০২৫.৪০.৬৮. ৮৮ (৫ম খণ্ড)-৩৮০ তারিখ ০২/১০/২০১৭ মূলে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এম তাজুল ইসলামসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান ও সাবেক ৩১ জন সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপ ও সমিতির অর্থ আত্মসাতের কারণে সমবায় অধিদফতর সমবায় আইনের ৪৯ ধারা মোতাবেক ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করলেও তা আজও সমিতির কোষাগারে জমা দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে রমনা, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও থানায় মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রমনা থানায় একটি মামলা করেছে। মামলা নং- ৫২। বংশাল থানার মামলাসহ আদালতে আরও দুটি সিআর মামলা রয়েছে।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার খোঁজ রাখছি। তিনি কানাডায় বাড়ি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তার সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করে খতিয়ে দেখছি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ১
,২০১৯)