দেশি কিংবদন্তিরা পারেননি, ‘বিদেশী’ মরগ্যান পারলেন
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: স্বদেশি কিংবদন্তিরা পারেননি, পারলেন ‘ভিনদেশি’ ইয়ন মরগ্যান। তিন তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেও স্বদেশি অধিনায়কদের নেতৃত্বে আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে ইংল্যান্ড। ‘আইরিশ’ মরগ্যানের হাত ধরেই ঘুচলো আজন্ম সে আক্ষেপ, এক ভিনদেশিই এনে দিলেন বহুল আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফিটি।
ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক মনে করা হয় মাইক ব্রেয়ারলিকে। তার অধীনে ১৯৭৯ সালে ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশরা। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাত্তাই পায়নি (হারে ৯২ রানে)। ১৯৮৭ সালে পারেননি মাইক গেটিংও। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে মাত্র ৭ রানে হেরে যায় ইংলিশরা।
একই পরিণতি ১৯৯২ সালে। এবার অধিনায়ক ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান গ্রাহাম গুচ। সেবার ইমরান খানের নেতৃত্বে অসাধ্য সাধন করে পাকিস্তান। ২২ রানে হেরে স্বপ্ন ভাঙে ইংলিশদের।
এরপর তো ২৭টি বছর বিশ্বকাপের ফাইনালেই উঠতে পারেনি ইংল্যান্ড। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় ক্রিকেটের জনকরা, মরগ্যানের নেতৃত্বে। আর তার হাত ধরেই ঘুরে যায় ইংলিশদের ভাগ্য, প্রথমবারের মতো শিরোপা উল্লাসে মাতে থ্রি লায়ন্সরা।
মরগ্যানের জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। ১৯৮৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। বাবা জডি মরগ্যান আর মা ওলিভিয়া মরগ্যানের দম্পতির সকল ছেলেপুলেই খেলতেন ক্রিকেট। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখে, এউইন মরগ্যানও হলেন সে পথের যাত্রী। ৩ ভাই আর ২ বোনের সবাই খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলে, মরগ্যানও তাই।
তবে তিনি শুধু খেলেননি! নিজের জীবন বোধকে মিশিয়েছেন তাতে। একগুঁয়েমি, জেদ আর রাগ সব ঢেলেছেন ক্রিকেটে। সফলতাও পেয়েছেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। কিন্তু একটা স্বপ্ন তো মনের মধ্যে ছিলই, আইরিশরা যে তখনও টেস্ট খেলে না।
আয়ারল্যান্ডের সবুজ জার্সি ছেড়ে তাই ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান মরগ্যান। এখানে শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। সে কারণে শুনতে হয় বহু কটুক্তি-সমালোচনা। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে ইংলিশরা প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পর সেই সমালোচনা আরও ডালপালা গজাতে থাকে।
জাতীয়তাবোধ নেই, ইংরেজদের জাতীয় সঙ্গীতের ‘গড সেভ দ্য দি কুইনে’ মরগ্যান গলা মেলান না বলেও অপবাদ আছে। তবে এত কিছুর পরও হাল ছাড়েননি। গত বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর তার নেতৃত্বগুণেই এক নাম্বার দল হয়ে উঠে ইংলিশরা।
নানা ঘটন-অঘটন পাশ কাটিয়ে ২৭ বছর পর এবারই নাম লেখায় ফাইনালে। পরের গল্পটা তো সবারই জানা। স্বদেশি কিংবদন্তিরা যা পারেননি, ভিনদেশি মরগ্যানই তা এনে দিলেন ইংল্যান্ডকে। এরপর নিশ্চয়ই তার জাতীয়তা নিয়ে আর প্রশ্ন উঠবে না। ইংলিশদের ইতিহাসের পাতায় যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেল মরগ্যানের নামটি, যার পাশে ‘ভিনদেশি’ শব্দটা বড্ড বেমানান।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ১৫,২০১৯)