মশা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2019/07/19/danggu-2.jpg)
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চলতি বছর রাজধানীতে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে মোট কতজন আক্রান্ত ও মারা গেছেন তার সঠিক হিসাব নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে!
সরকারি হিসাবে অর্থাৎ মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে চলতি বছর (গতকাল ১৮ জুলাই পর্যন্ত) রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৬১ জন।
গত বছর সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৭ জন। এ বছরের সাড়ে ৬ মাসেই গত বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে এ মৌসুমে মৃতের সংখ্যা মাত্র পাঁচজন। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে দু’জন ও জুলাই মাসে একজন মারা যান।
কিন্তু বিভিন্ন সূত্রের দাবি বাস্তবে এ তথ্য মোটেই সঠিক নয়। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা চারগুণেরও বেশি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সঠিক সংখ্যা তাদের কাছে নেই। কারণ রাজধানীর সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য পাচ্ছেন না। তাদের অসহযোগিতার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার তথ্যগত গরমিলে বিব্রত সরকার।
ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা অতি ক্ষুদ্রাকার প্রাণি। বর্তমানে এ মশা নিয়ে দেশজুড়ে হৈ চৈ চলছে। দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রায় সব মন্ত্রী, সচিব, ঢাকার মেয়র এমনকি বাংলাদেশস্থ আমেরিকান রাষ্ট্রদূত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্মকর্তা সবাই এখন মশা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছেন। একার্থে ডেঙ্গুবাহী মশা এখন টক অব দি কান্ট্রি।
সবাই একবাক্যে বলছেন, ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মশক নিধনে সপ্তাহব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে। মশার কামড়ের ভয়ে সচিবালয়ে অফিস করতে যেতে ভয় পাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ডেঙ্গু এখন চিন্তার বিষয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিস (এমআইএস) প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন-২০১৮ এর তথ্যানুসারে, রাজধানীসহ সারাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৫ হাজার ৫৪টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৯ হাজার ৫২৯টি। এ সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য জানায় না। শত শত হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে অর্ধশতাধিকের কাছ থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বারডেম, বিএসএমএমইউ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিজিবি হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ মেডিকেল, ইবনে সিনা, স্কয়ার, কমফোর্ট, শমরিতা, ডেল্টা, ল্যাব এইড, মনোয়ারা, সেন্ট্রাল, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ওমেন্স মেডিকেল, গণস্বাস্থ্য, গ্রিন লাইফ, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ইউনাইটেড, খিদমা, রাশমনো, সিকদার, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল, অ্যাপোলো, আদ-দ্বীন, ন্যাশনাল, ইউনিভার্সেল, বিআরবি, আজগর আলী, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক, কমিউনিটি হাসপাতাল, সালাউদ্দিন, পপুলার, উত্তরা ক্রিসেন্ট, আনোয়ার খান মর্ডান, ইব্রাহিম, শাহাবুদ্দিন, নিবেদিতা এ সব হাসপাতালের অধিকাংশ থেকে কমবেশি ডেঙ্গু রোগীর তথ্য নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে। হাতে গোনা এ কয়েকটি হাসপাতাল থেকে পাওয়া এ তথ্য সামগ্রিক ডেঙ্গু রোগীর তথ্য বহন করে না।
মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের সময় কোনো ডেঙ্গু রোগী পেলে রক্ত সংগ্রহ করে তাদের কাছে নমুনা ও রোগী-সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে বলা হলেও তারা পাঠাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, তাদের কাছে রক্তের নমুনা আসলে রোগী কোন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত (ডেন-১, ২, ৩ ও ৪) তা জেনে উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু রাজধানীর শত শত প্রাইভেট হাসপাতাল তথ্য দিচ্ছে না।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারের কাছে ডেঙ্গু-সংক্রান্ত তথ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটি সফটওয়্যারের সাহায্যে ডেঙ্গু-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে পাঠানোর কথা থাকলেও হাসপাতালগুলো তথ্য পাঠাচ্ছে না।’
শুধু তাই নয়, তিনি নিজে টেলিফোন করে তথ্য চেয়ে পাঠালেও অনেকে তথ্য দিতে গড়িমসি করছেন বলেও অভিযোগ করেন ডা. আয়েশা আক্তার।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ১৯,২০১৯)