‘হাঁটতেও পারত না, ফিডার খাইত, তারে নির্যাতন কইরা মাইরা ফালাইল’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ছোট্ট তিন শিশু। এক শিশু ঘুমাচ্ছে, অন্যজন খেলছে। চুপচাপ অরেকজন কেবল দেখছে। এই তিন শিশুকে নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বসে আছেন তাদের মা রাজিয়া সুলতানা।
সেখানে আরেক শিশু রয়েছে। নাম আয়েশা মনি। শরীরী উপস্থিতি নেই তার। ব্যানারে ছবি হয়ে আছে সে! গত শীতের এক সন্ধ্যার ঘটনা। গরম খিচুরি খাচ্ছিল দুই বছর বয়সী আয়েশা মনি। খাওয়া থেকে তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তাই এখানে তার উপস্থিতি ছবিতে।
শিশু আয়েশা মনিকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে তার তিন শিশুবোন ও মা রাজিয়া সুলতানা রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে তাদেরকে সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।
ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ থাকা নাহিদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তবে প্রায় সাত মাস পার হতে থাকলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেয়নি।
মা রাজিয়া সুলতানার অভিযোগ- নাহিদ প্রভাবশালী। ময়নাতদন্তে তিনি প্রভাব খাটিয়েছেন। তাই তার শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ময়নাতদন্তে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসেনি।
ঘটনার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় অভিযোগ থাকা নাহিদ পার পেয়ে যেতে পারেন বলেও আশঙ্কা রাজিয়া সুলতানার।
এ বিষয়ে রাজিয়া সুলতানার বক্তব্য, ‘খালি শুনতাছি তদন্তই হইতাছে, তদন্তই হইতাছে। এরমক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, সবাই জানে, তারপরও তদন্তই করতাছে। কবে যে বিচার শেষ অইব, আর কবে যে আমি বিচার পামু। আজকে সাত মাস হয়ে গেছে, বিচার পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে শিয়ান একটা মাইয়্যা হইত, বলতে পারতো সে গেছে। বা অন্য কোনো ঘটনা হতে পারত। এই বাচ্চা তো ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না। কথাও ঠিকমতো বলতে পারে না। ফিটার খাইত আমার বাচ্চা। কোলে কইরা নিয়া ধর্ষণ কইরা, তিন তলা থেইকা ফালাইয়া মারল। সবাই দেখল, বললো – আর কী প্রমাণ চাই?’
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে রাজিয়া সুলতানা জানান, গেণ্ডারিয়ার সাধনার নিকেতনের গলিতে গত জানুয়ারিতেই উঠেছেন। এর পঞ্চম দিনের (৫ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে দুই বছর বয়সী আয়েশা মনিকে গরম খিচুরি খেতে দেন। নতুন বাসায় রান্না করার ব্যবস্থা না থাকায় বাসা-মালিকের ওখানে গিয়ে রান্না করছিলেন। এর অল্প কিছুক্ষণ পরই তার বড় মেয়ে এসে জানায়, আশেয়া মনি নাই। এর মধ্যে আয়েশাকে কোলে করে নিয়ে যায় নাহিদ। ধর্ষণের পর হত্যা করে তাকে তিন তলা থেকে ফেলে দেয় নাহিদ।
রাজিয়া সুলতানা রান্নাঘর থেকে আসতে আসতেই স্থানীয় লোকজন আয়েশা মনিকে সেখানকার ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে তার শিশু সন্তানকে পাননি। ন্যাশনাল হাসপাতাল তাৎক্ষণিকভাবে আয়েশা মনিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
ঢামেকে গিয়ে আদরের আয়েশা মনিকে পান রাজিয়া সুলতানা। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আয়েশা মনিকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজিয়া সুলতানা দাবি করেন, চিকিৎসকরা তাকে জানায় তিনতলা থেকে ফেলে দেয়ার আগে তাকে ধর্ষণ হয়। তখন পুলিশও একই কথা বলেছিল। কিন্তু অজানা কারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আটকে যায়। তিন থেকে চার মাস পর যখন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়, তাতে দেখা যায়, তার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়নি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি নাহিদের পক্ষে কাজ করছে। নাহিদ অনেক টাকা-পয়সাও খরচ করছে। তাই ৭ মাস পার হতে থাকলেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে নাহিদ মামলা থেকে প্রভাব খাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন রাজিয়া সুলতানা।
এই মায়ের দাবি, দুই বছর বয়সী তার কন্যা শিশুকে নির্যাতন, কষ্ট দিয়ে হত্যাকারীর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ২২,২০১৯)