বগুড়ায় ৪ যুবককে গণপিটুনি, পিকআপে আগুন
বগুড়া প্রতিনিধি : ছেলেধরা সন্দেহে এবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বৈঠাভাঙ্গা এলাকায় ৪ যুবককে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিজ অফিস কক্ষে নিয়ে এলে বিক্ষুব্ধ জনতা ওই ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ঘেরাও করে। এ সময় তারা সন্দেহভাজন ৪ যুবককে তাদের কাছে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠুকেও অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে পুলিশ অবরুদ্ধ চেয়ারম্যানসহ সন্দেহভাজন ৪ যুবককে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধরা। এক পর্যায়ে আটক ৪ যুবকের ব্যবহৃত পিক-আপভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। সোমবার দুপুরের এ ঘটনায় এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৭টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ওই ৪ যুবককে গাবতলী থানায় নেওয়া হয়। তারা হলেন- গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের কর্ণিপাড়া গ্রামের হযরত আলী প্রামাণিকের ছেলে ফাহিম প্রামাণিক (২৪), পার ধুনট মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে লুৎফর রহমান (৩৫), ধুনট জোড়শিমুল গ্রামের নজির হোসেনের ছেলে দুলাল হোসেন (২২) ও তার ভাই নিয়ামুল হোসেন (৩৬)। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ১২ জনকে আটক করেছে।
দুর্গহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু জানান, ওই চার যুবক বেলা সাড়ে ৩টার দিকে একটি পিক-আপ ভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন-১৩-৩৮৪৯) নিয়ে বৈঠাভাঙ্গা গ্রামের দিকে ঘোরাঘুরি করছিল। তাদের ব্যবহৃত পিক-আপের ভেতরে ধারালো চাকু দেখার পর গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। এরপর তাদের পরিচয় ও বৈঠাভাঙ্গা গ্রামে আসার কারণ জানতে চাইলে ওই ৪ যুবক অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। এতে গ্রামবাসীর সন্দেহ বাড়ে এবং তারা ওই ৪ যুবককে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। বিষয়টি জানার পর তিনি গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে ওই ৪ যুবককে উদ্ধার করে দুর্গাহাটা বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এনে রাখেন। পরে গাবতলী থানায় খবর দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই সেখানে জনতার ভিড় বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা ৪ যুবককে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। তাদের কথা না শোনায় বিক্ষুব্ধরা চেয়ারম্যানকেও অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে গাবতলী থানাপুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে জনতা তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর পুলিশের গাবতলী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন ও গাবতলী থানার ওসি সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন ৪ যুবককে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। পুলিশ তাতে রাজি না হওয়ায় গ্রামবাসী আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এরপর রাত সাড়ে ৭টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে ওই ৪ যুবককে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
দুর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু জানান, ওই চার যুবক ছিনতাইকারী। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তারা সেখানে ঘোরাঘুরি করছিল। গাবতলী থানার ওসি সেলিম হোসেন বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার কারণে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সন্দেহভাজন চার যুবকের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ২২,২০১৯)