দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বন্যাকবলিত লালমনিরহাটে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করলেও এলাকায় দেখা যাচ্ছিলো না সদর আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে। এ নিয়ে খোদ দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেই চাপা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণে গিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন কাদের। এই আলোচনা হচ্ছে ভাড়ায় হেলিকপ্টার নিয়ে গিয়ে ত্রাণ বিতরণের কারণে।

বলা হচ্ছে, জিএম কাদের আড়াই লাখ টাকারও বেশি ভাড়ায় হেলিকপ্টার নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় এলেও দুর্গতদের (লালমনিরহাট ও পার্শ্ববর্তী জেলা কুড়িগ্রামে) যে ত্রাণ দিয়েছেন, তা সাকুল্যে দুই লাখ টাকার বেশি হবে না। অনেকে এটাকে ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’ প্রবাদের উদাহরণও বলছেন।

শনিবার (৩ আগস্ট) সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে কুড়িগ্রাম যাওয়ার পর দুপুর ১টায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার কাজিচওড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছায় কাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টার। সেখানে ত্রাণ বিতরণ শেষে বিকেল সোয়া ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে আবার হেলিকপ্টারযোগে রওয়ানা হন কাদের। হেলিকপ্টার অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য মোতায়েন করা হয় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দল।

স্থানীয়রা জানান, ১০ জুলাই থেকে প্রায় ১২-১৫ দিন বন্যায় পানিবন্দি ছিল লালমনিরহাট সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলা পাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। তখন থেকেই বন্যার্তদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ চলছিল। এতদিন নিজের নির্বাচনী এলাকায় না এলেও শনিবার আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাদের। যদিও বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ আগেই দুর্গতরা ঘরে ফিরে গেছেন।

কাজিচওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে হেলিকপ্টারযোগে নামার পর প্রশাসনের গাড়িতে করে নিকটস্থ রাজপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যান জিএম কাদের। সেখানে ৫০০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেন কাদের। যদিও সেই চাল পরিমাপ করে অনেকেই ৮-৯ কেজি করে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। একইভাবে চাল দেওয়া হয়েছে কুড়িগ্রামের ৫০০ বন্যার্ত পরিবারের মাঝেও।

তিস্তা চরাঞ্চল রাজপুর ইউনিয়নের চেংড়ার চরের এনামুল হক (৫২) ও ফারুক মিয়া (৪৮) বলেন, ‘১৫-১৬ দিন বানের পানিত ভাসলেও এমপির দেখা পাই নাই। পানি নামি যাওয়ার ১৫ দিন পর উড়োজাহাজোত (হেলিকপ্টার) চরি (চড়ে) এমপি আসিল। ভাবচিনো অনেক তেরান পামো (ভাবলাম অনেক ত্রাণ পাবো)। ১৫০ টাকা নৌকা আর ভ্যান ভাড়া দিয়ে আসিয়া তেরান পাইনো ২৫০ টাকার চাউল। এর চেয়া কামলা (দিনমজুরি) দিলে সাড়ে তিনশ’ টাকা পাইনো হয়। হামার দুঃখ কায়ো বুঝে না বাহে।’

একই এলাকার চরখলাই ঘাটের হযরত আলী (৫৫) বলেন, ‘এমরা আইসে মানুষোক দেকপার (লোক দেখানো)। ২৫০ টাকার চাউল নিবার জন্য খরচ হইলো ২০০ টাকা। খাজনার চেয়া বাজনা বেশি বাহে।’

আলাপ করলে জি এম কাদেরকে বহনকারী সংশ্লিষ্ট এভিয়েশনের হেলিকপ্টারটির পাইলট ক্যাপ্টেন ইসলাম ও রেজা বলেন, ঢাকা থেকে লালমনিরহাটে আসতে সোয়া ঘণ্টার মতো লাগে একটি হেলিকপ্টারের। এ বাহনের ফ্লায়িংয়ের ভাড়া ঘণ্টাপ্রতি লাখ টাকা এবং অপেক্ষা ঘণ্টাপ্রতি ৫ হাজার টাকা ধরা হয়। তবে এই ট্রিপের (জিএম কাদেরের ভাড়া) খরচ ঢাকায় গিয়ে নির্ধারণ করা হবে।

পাইলটের তথ্য অনুসারে, আসা-যাওয়া ধরলে আড়াই ঘণ্টায় ভাড়া আসে আড়াই লাখ টাকা। যেহেতু এই হেলিকপ্টার লালমনিরহাটে আসার আগে কুড়িগ্রামেও গিয়েছে এবং সেখানে অবতরণ-উড্ডয়ন করেছে, সেখানেও সময় গণনা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাড়তি খরচ সেখানেও যোগ হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ শেষে সোয়া ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে হেলিকপ্টারটি। সেক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা গেছে অপেক্ষায়ও।

ত্রাণ বিতরণস্থলে থাকা কয়েকজন বানভাসি বলেন, দুই জেলায় ৫০০ করে ১০০০ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে ১০ হাজার কেজি (প্রায় ১০ টন) চাল দেওয়া হয়েছে যদি ধরা হয়, তাহলে খোলা বাজারে এ প্রকারের চাল প্রতিটন ২০ হাজার টাকা ধরলে খরচ আসে দুই লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই জেলা মিলিয়ে জিএম কাদের ত্রাণ দিয়েছেন দুই লাখ টাকার। এই দুই লাখ টাকার ত্রাণ বিতরণের জন্য তিনি হেলিকপ্টার ভাড়াই দিয়েছেন আড়াই লাখ টাকার বেশি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ০৪, ২০১৯)