দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চড়া দামে ওডোমস (মশা প্রতিরোধী মলম) বিক্রি বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানে ‘বিরক্ত’ হয়েছেন ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা। দোকানে ওডোমস থাকলেও ভুক্তভোগীদের ‘শিক্ষা’ দিতে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।

ওডোমস ক্রিম ও গুডনাইট রোল অন কিনতে আসা ক্রেতাদের দোকানিরা সাফ বলে দিচ্ছেন, ‘যৌক্তিক’ কারণে ওডোমসের দাম বেশি নিলেও জেল-জরিমানার মুখোমুখি হওয়ায় আপাতত বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও ক্রেতা যদি চেনা হন তাহলে দোকানের স্টোর থেকে বেরিয়ে আসছে ছোট বড় যেকোনও ওডোমসের প্যাকেট- যত লাগবে তত। এটা বিক্রির কোনও মানিরিসিট দেওয়া হচ্ছে না। আর চড়া দামে অনলাইনের বিক্রিবাট্টা তো আছেই।

এদিকে মশার কামড় থেকে বাঁচতে কার্যকর ক্রিম না পেয়ে হয়রানিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। চড়া দাম দিতে রাজি থাকলেও দোকানিরা অচেনা ক্রেতাদের কাছে ক্রিম বিক্রি করছেন না। সবার কাছে নয়, কারও কারও কাছে বিক্রি করছেন কেন- প্রশ্নে নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাজ ফার্মার এক বিক্রেতা বলেন, ‘রবিবার অভিযানে ক্রেতা সেজে এসে ভিডিও করে তারপর জরিমানা করা হয়েছে। ফলে যাদের চিনি না তাদের কাছে বিক্রির ঝুঁকি আমরা আর নেবো না।’ কলাবাগানের এক ফার্মেসির মালিক বলেন, ‘আমরা বিক্রি বন্ধ রাখলে তখন বুঝবেন মানুষজন কী করে।’
যদিও অভিযান পরিচালনাকারীরা বলছেন, ‘আমরা এই ক্রিম বিক্রি নিষিদ্ধ করিনি। একশ’ টাকার জিনিস সুযোগ বুঝে পাঁচশ’ টাকায় যারা বিক্রি করছেন তাদের সাজা দিয়েছি এবং নায্যমূল্যে বিক্রির কথা বলেছি। মানুষের কষ্টের সুযোগে অতি মুনাফা আমাদের চরিত্রের অংশ হয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপে চাহিদা বাড়ায় গত ১৫ দিন ধরেই ওডোমসের দাম কয়েকগুণ বেশি নেওয়া হচ্ছিলো। রবিবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর কলাবাগান ও গুলশান এলাকার পাঁচটি বিপণন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিটি ওডোমসের দাম ৩০০ থেকে ৫৪৮ টাকা পর্যন্ত রাখছিল এসব সুপারশপ ও ফার্মেসি, যা এতদিন বিক্রি হচ্ছিল ১২৫ টাকায়।

অভিযানের পরদিন সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে পান্থপথের লাজ ফার্মায় গিয়ে এক ক্রেতা ওডোমস চাইলে নেই বলে জানান বিক্রয়কর্মী। কখন পাওয়া যাবে প্রশ্নে বিক্রয়কর্মী জানান, এ ধরনের ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ। কবে নিষিদ্ধ হলো প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গতকাল অভিযানের কারণে আমরা আর বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপকার করতে গিয়ে যদি দোকান বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিক্রি কেন করবো। আর আমরা বিক্রি না করলে ক্রেতারা কীভাবে সামাল দেবেন তা দেখা যাবে।’ ঘটনার পরপরই সেই ক্রেতা ফেসবুকে পোস্ট দেন। পরের দিন মঙ্গলবারও একই সময়ে কলাবাগানের তাজরিনসহ আরও বেশ কয়েকটি ফার্মেসিতে গিয়ে একই ধরনের কথা শোনা যায়। বিক্রয়কর্মী বলছেন, ‘দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ আছে। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর না বুঝে হুট করে অভিযান চালালে ন্যায়বিচার হয় না।’ কলাবাগানের প্রিয়া এন্টারপ্রাইজ, এশিয়ান ফার্মেসি, কাশেম ড্রাগস কেউই ওডোমস বিক্রি করতে রাজি হননি। নেই নাকি বিক্রি করবেন না প্রশ্নে তারা সরাসরি কিছু বলতেও রাজি নন; বরং সিঙ্গাপুরের অচেনা ওষুধের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন- যেটির বিষয়ে ক্রেতাদের আস্থা নেই।

কলাবাগানের এক বিক্রেতা বলেন, ‘ওডোমসের দামের কারণে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল। এই জিনিস আমরা আমদানি করি না, নিজেদের আয়োজনে আনি। এখন চাহিদা বেশি হওয়ায় ভারত থেকে আসা এই ক্রিমের কেনা দামই যদি তিনশ’ টাকা পড়ে তাহলে আমরা বিক্রি করবো কত টাকায়?’ তবে তারা এসব বলছেন ঠিকই কিন্তু পরিচিত ক্রেতা দোকানে গেলে ওডোমস পাচ্ছেন এবং তা বিক্রির কোনও মানিরিসিট দেওয়া হচ্ছে না।

লাজ ফার্মায় গত এক সপ্তাহ কোনও ওডোমস বিক্রি হয়নি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই দেখেছি আড়াই শ’ টাকার কমে বিক্রি সম্ভব নয় তখনই বন্ধ করে দিয়েছি।’ যদিও তাদেরই একটি শাখায় এই কথা হওয়ার কিছুক্ষণ আগে একটি ওডোমস ও একটি রোল অন বিক্রি করা হয়েছে বিনা মানিরিসিটে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখন দেশি কোম্পানি রেনেটার পুনর্ভা নামে একটি স্প্রে এবং সিঙ্গাপুর থেকে আনা একটি মশার ওষুধ বিক্রি করছি, যেগুলোর দাম আড়াইশ’ টাকার মধ্যেই রাখার চেষ্টা করছি।’ ক্রেতাদের অধিকার সবার আগে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য রক্ষায় তারা কোনও অসৎ কাজ করবেন না বলেও জানান।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান বলেন, ‘আমরা অভিযানের দিন নিজেরা কিনে মাত্রাতিরিক্ত দামে বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি এবং সেটার ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়েছে। এর সঙ্গে তাদের (ফার্মেসির মালিক) বিক্রি না করতে চাওয়ার সম্পর্ক থাকার কথা না।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ০৬, ২০১৯)