দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ঢাকাই চলচ্চিত্রে যখন সিনেমার ই সংকট, তখন ‘হিট সিনেমা’ নিয়ে কথা বলাই বোকামি! তবু সারা বছরে হাতে গোনা একটি কি দুটি ছবির লগ্নি কোনোভাবে উঠে আসছে প্রযোজকের হাতে। বেশীর ভাগ সময় ই এগুলো আবার ঈদ কেন্দ্রিক এবং শাকিব খান অভিনীত কোনো সিনেমা! কিন্তু সিনেমা খরার বাজারেও সবার মুখে মুখে একটি কথা ঘুরছে গত বছর থেকেই, আর সেটি হলো ‘অক্টোবরে সিনেমা মুক্তি’ মানেই নাকি ছবি হিট!

নিয়মিত দর্শক হারানোর পর থেকে ঈদকে ঘিরেই এখন মানুষ শুধু হলমুখি হয়। ওই সময়ে হলে সিনেমা যাই হোক, সেটা দেখতেই ঈদের আমেজে সিনেমা হলে দর্শকের ভিড় দেখা যায়। তাই নির্মাতা ও প্রযোজকের ছবি মুক্তির প্রথম টার্গেটই থাকে ঈদকে ঘিরে! এদিকে ঈদ কেন্দ্রিক হল দখলের বাজারে প্রতিযোগিতায় শাকিব খানের ধারে কাছে কেউ নেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই ঈদ কেন্দ্রিক ছবি নিয়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহে তার দাপটই চলমান। আসছে ঈদেও ব্যতিক্রম ঘটছে না।

ঈদ কেন্দ্রিক ও শাকিব নির্ভরতার বাইরে গিয়ে গত তিন বছর ধরে ব্যতিক্রম ঘটছে ঢাকাই চলচ্চিত্রে! ঈদে মুক্তি দেয়া ছাড়াও যে কোনো ছবি দর্শক নন্দিত হতে পারে, দর্শককে হলে নিয়ে আসতে পারে এবং সেই ছবি হিট-সুপার হিট হতে পারে সে সব হিসেব নিকেষ কিছুটা হলেও বদলে দিয়েছে ‘গত তিন বছর’! আর সেখানে ‘ফ্যাক্ট’ হয়ে উঠছে ‘অক্টোবর মাস’! এমনকি কেউ কেউ অক্টোবর মাসকে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য আশির্বাদ-এর মাস হিসেবেও বলতে শুরু করেছেন!

এমনটা ভাবার অবশ্য যৌক্তিক কারণ আছে। এর পেছনে রয়েছে গত তিন বছরের পরিসংখ্যান। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮। এই তিন বছরের প্রতি অক্টোবর মাসে ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গন ছিলো রমরমা। সিনেমা নিয়ে বেশ সরগরম পড়েছিলো দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে। টানা তিন বছরের প্রতিটি অক্টোবর মাস জুড়ে দেশের প্রেক্ষাগৃহে বাংলার সব শ্রেণির দর্শকের সিনেমা দেখার হিড়িক পড়ে গিয়েছিলো।

কোন্ ছবিগুলো মাতিয়েছে গত তিন বছরের অক্টোবর? ২০১৬ সালে অমিতাভ রেজা পরিচালিত বহুল আলোচিত ছবি ‘আয়নাবাজি’ মুক্তি পেয়েছিলো ৩০ সেপ্টেম্বর। প্রথম সপ্তাহে মাত্র ১৯টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। কিন্তু অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছবিটি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় চারদিকে। শেষ পর্যন্ত অক্টোবর মাসব্যাপী দেশের প্রায় সব সিনেমা হলেই চলে চঞ্চল চৌধুরী-নাবিলা অভিনীত সেই ছবিটি!

ঠিক এর পরের বছরের অক্টোবরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত বহুল আলোচিত ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই (৬ অক্টোবর) দেশের শতাধিক সিনেমা হলে চলে আরিফিন শুভ-মাহি-এবিএম সুমন অভিনীত ছবিটি। এই ছবিটি মুক্তির সাথে সাথে দেশব্যাপী সাড়া পড়ে যায়। বাড়তে থাকে হল সংখ্যা, ছবিটি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ। ছবি মুক্তির একশোতম দিন উদযাপন করা হয়। নিকট অতীতে বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে এমন উদাহরণ বিরল!

ঠিক এর পরের বছর দেশব্যাপী তোলপাড় ফেলে দেয় অনম বিশ্বাস পরিচালিত জয়া আহসানের প্রথম প্রযোজিত ছবি ‘দেবী’। ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া এই ছবিটিও দেশজুড়ে রীতিমত তোলপাড় ফেলে দেয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা কয়েক সপ্তাহ ‘হাউজফুল’ চলে ছবিটি। বাণিজ্যের পাশাপাশি দর্শকের কাছেও প্রশংসিত হয় ‘দেবী’।

২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের জন্য কোন ছবি প্রস্তুত? ধারাবাহিকতা রক্ষার সূত্র কি জানা আছে কারো? এখন পর্যন্ত এ বছরের অক্টোবরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে, এমন কোনো ছবির নাম ঘোষিত হয়নি। তবে অক্টোবরের সূত্র মেনেই আপাতত পা ফেলছেন নির্মাতা গোলাম সোহরাব দোদুল।

এ বছরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে গোলাম সোহরাব দোদুলের প্রথম ছবি ‘সাপলুডু’, ছবিটির মুক্তির তারিখ এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে নির্মাতার মনে মনে টার্গেট ঢাকাই ছবির আশির্বাদপুষ্ট মাস অক্টোবরকেই!

কথায় কথায় এমনটাই জানালেন দোদুল। বললেন, আমরা ‘সাপলুডু’র মুক্তির আগে প্রচার-প্রচারণার জন্য চার মাস সময় চেয়েছিলাম। ইতোমধ্যে ছবিটির প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। আমাদের অফিশিয়াল পেইজে বহু দর্শক অনুরোধ করেছেন যেন ‘সাপলুডু’ ছবিটি অক্টোবরে মুক্তি দেয়া হয়। তারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু হিট ছবির কথা তুলে ধরে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে আমাদের কাছে ছবিটি নিয়ে এমন আবদার করেছেন। আমরাও বিষয়টি সিরিয়াসলি ই ভেবে দেখছি। ‘সাপলুডু’ হিট করতে দর্শকের নিজে থেকে এমন ভাবনায় সত্যিই আমরা পুরো টিম কৃতজ্ঞ।

দর্শকের কাছে ছবি ভালো না লাগলে কোন মাস বা কোন্ মুহূর্তে মুক্তি পেল এটা ডিপেন্ড করে না। এটা যেমন সত্যি, তেমনি পরিসংখ্যানও কিন্তু একটা ফ্যাক্ট। সব বিষয় ই আমরা চারদিক থেকে ভেবে দেখছি। হয়তো অক্টোবরেই আমরা পর্দায় আসতে পারি। তবে আমি নিশ্চয়তা দিলাম, সাপলুডু যখনই মুক্তি পাক এটা দর্শককে স্পর্শ করবেই। আমরা যে গল্পটা দেখাতে চেয়েছি সেটা দর্শক প্রাণ ভরে দেখবেন, এই নিশ্চয়তা আমরা দর্শককে দিতে চাই।-বলছিলেন গোলাম সোহরাব দোদুল।

আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক ও দেবী। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’র পর এই তিনটি ছবিই বাংলার প্রেক্ষাগৃহে জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলো। কাকতালীয় ভাবে গত তিন বছরের প্রতি অক্টোবরে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোও ছিলো নির্মাতাদের প্রথম ছবি! এদিকে আসছে অক্টোবরে মুক্তির প্রতীক্ষায় থাকা ‘সাপলুডু’ ছবিটিও নির্মাতার প্রথম ছবি।

অমিতাভ রেজা, দীপঙ্কর দীপন ও অনম বিশ্বাস ছবি নির্মাণের আগে থেকেই নাটক, বিজ্ঞাপন নির্মাণের কারণে দেশের দর্শকের কাছে পরিচিত ছিলেন। তাদের মতোই ছবি করার আগে থেকে পরিচিত গোলাম সোহরাব দোদুল। তিনিও ‘সাপলুডু’ নির্মাণ-এর আগে বহুদিন ধরে ছোটপর্দায় কাজ করছেন।

সমীকরণ মেলানোর সময় নয়, এখন সময় অপেক্ষার। দেখা যাক, অমিতাভ রেজা, দীপঙ্কর দীপন কিংবা অনম বিশ্বাসের ছবির মতো দোদুল তার ছবি নিয়ে কতোটা দর্শকের কাছে পৌঁছুতে পারেন! অক্টোবর তার জন্য কতোটা সৌভাগ্য বয়ে আনতে পারে, এটা সময় ই বলে দিবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ০৭, ২০১৯)