ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন মেয়র
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2019/08/07/atikul.jpg)
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
বুধবার গুলশান ডিএনসিসি নগর ভবনে মশক নিধন এবং কীটনাশক ছিটানো কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
মেয়র বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যাদের স্বজন মারা গেছেন সেই পরিবারই বোঝে এর কত কষ্ট। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আসুন আমরা সব ধরনের পদক্ষেপের পাশাপাশি নিজেদের সচেতনতাও বৃদ্ধি করি।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় ডিএনসিসির বিভিন্ন কার্যক্রম এবং পদক্ষেপ তুলে ধরেন ডিএনসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সেই সঙ্গে নগরবাসীরকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করতে গত সাতদিনে দেড় লাখ লিফলেট বিতরণ করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি এডিস মশার সম্ভব্য প্রজনন স্থল, লার্ভা পাওয়ায় বিভিন্ন ভবন মালিক ও কর্তৃপক্ষকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে।
নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) গুলশান নগর ভবনে একটি কল সেন্টার চালু করেছে। কল সেন্টারটির নম্বর হচ্ছে ০১৯৩২-৬৬৫৫৪৪। এ নম্বরে যে কেউ ফোন করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন।
ডিএনসিসির কল সেন্টারটি দিন-রাত ২৪ ঘন্টা চিকিৎসকগণ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করছে।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউ না কেউ না ফেরার দেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে দেশকে মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
সরকারি সব সংস্থা ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে পারব বলে আশা করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
সরকারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের হাসপাতালে প্রায় ৩০ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১ হাজার ৯২১ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭ হাজার ৯৬৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৩৪৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮৩, মিটফোর্ডে ১০৪, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৮, শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে ৮৬, বারডেমে ১৯, বিএসএমএমইউয়ে ৪৩, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২৬, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২১, বিজিবি হাসপাতালে ৭, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৪২ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৮ জন ভর্তি হন। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৪৬১ ও ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য বিভাগে ১ হাজার ৬৪ জন ভর্তি হন।
ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ২৭৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩১, খুলনা বিভাগে ১৬৪, রংপুর বিভাগের ৬৬, রাজশাহী বিভাগের ১০৬, বরিশাল বিভাগে ১২৪, সিলেট বিভাগে ৩২ ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৬৮ জন ভর্তি হন।
সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৮ জন (এপ্রিল ২ জন, জুন তিনজন ও জুলাই মাসে ১৩ জন) বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা তিনগুণের বেশি হবে বলে বলা হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক, আমলা, গৃহবধূ ও শিশুসহ সব বয়সের রোগী প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ০৭, ২০১৯)