যেকোনো সময় যে কাউকে নিজের কাছে যাওয়ার অনুমতি প্রধানমন্ত্রীর
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: দারিদ্র্য বিমোচন ও দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে, উল্লেখ করে যেকোনো কাজে নিজের কাছে যেকোনো সময় যে কাউকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে এটা ঠিক, কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা, কাজেই সেই হিসেবে মনে করি, দেশের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেখানে প্রটোকলের বাধা আমি কখনও মানি না, মানতেও চাই না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই সবার সঙ্গে মিশতে, জানতে এবং কাজ করতে। আমরা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করব, যাতে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।’
রোববার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। কিন্তু তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প অনুযায়ী তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।’
নিজ কার্যালয়কে (পিএমও) বিষয়টির ওপর লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু আমাদের একটা ভালো সেটআপ আছে, তাই এই দফতর থেকেই এ বিষয়টা নিয়ে নজরদারি করা দরকার। যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারে, আমাদের অর্জনগুলো আমরা ধরে রাখতে পারি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বিশাল বাজেট পেশ করেছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার নিয়ে তাদের ভৌত কাজ বন্যার পরই যাতে শুরু করা যায়, সে লক্ষ্যে পেপার ওয়ার্ক শেষ করে দ্রুত উন্নয়ন কাজ করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই বাংলাদেশে বন্যা হবে এবং এ দেশের মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গেই বসবাস করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যার পরই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গতি বাড়াতে হবে, যাতে এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে আরও সক্রিয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটি এলাকায় একটু খোঁজ নেয়া দরকার, আমরা সতর্ক করে দিয়েছি, কোনো এলাকায় কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ ভিক্ষা করবে না। যেখানেই গৃহহীন থাকবে, তাদের একটা ঘর করে দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ যারা ঘরে ফিরে যেতে চায়, তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে আমরা বস্তিবাসীর ওপর সার্ভে করেছিলাম। এই কাজগুলো আবার করতে হবে।’ তিনি ‘শান্তি নিবাস’ এবং ‘অবসর’ কর্মসূচিও পুনরায় চালুর কথা বলেন।
তার সরকার প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করেছে এবং এরপর আরও যত উপরে ওঠার চেষ্টা করা হবে অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই তা দুরূহ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় কাজের প্রতি সবাইকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘এখন কিন্তু অত দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না, অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই এটা হয়। এর থেকে যেন পিছিয়ে না যাই, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মসিউর রহমান এবং ড.তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পিএমও’র এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি দমনে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে ঘুষ খাবে, সেই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সেও অপরাধী। এ বিষয়টা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিলে এবং এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ হলে অনেক কাজ আমরা দ্রুত করতে পারব।’
এ সময় তার সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন সক্রিয় থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা উপার্জন অনুযায়ী ট্যাক্স প্রদানের বিষয়টিও লক্ষ্য রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কে কত ট্যাক্স দিল আর কে কত খরচ করল, তারও একটা হিসাবে নেয়া দরকার।
দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বাংলাদেশে বৃষ্টি ও বন্যা হয় এবং এটা স্বাভাবিক। তবে এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেন কম হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং বন্যা মোকাবিলায় আমরা যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি সেটাও বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ পলিবাহিত ব-দ্বীপ হওয়ায় এর মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় বন্যার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু এর ক্ষতিটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। যে কোনো পরিকল্পনায় মাথায় রাখতে হবে বন্যা বন্ধ করে নয় বরং বন্যার সঙ্গে বসবাস করা আমাদের শিখতে হবে।’
দেশে ডেঙ্গু সম্পর্কে দেশবাসীকে আরও সচেতন থাকার এবং এ বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এবার শুধু আমাদের দেশেই নয়, আশপাশের অনেক দেশেই ডেঙ্গু দেখা গেছে। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে মহামারি আকারে- যেমন ফিলিপাইনে মহামারি আকারে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী ডেঙ্গু প্রতিরোধে পিএমও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, নিজের ঘর-বাড়ি ও কর্মস্থলের চারপাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নিজেকে সচেতন হতে হবে। যাতে কোথাও পানি জমে এ রোগ সৃষ্টিকারী লার্ভা জন্মাতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও এই রোগের প্রকোপ অনেকটা রয়ে গেছে এবং বিভিন্ন জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের আরেকটু সতর্ক হতে হবে।
দেশের মানুষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের কাজটি নিজেই করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘পাশ্চাত্য বিশ্বের অনেক কিছুই আমরা অনুকরণ করতে চাই। কিন্তু তারা যেভাবে নিজেদের কাজটা নিজেরা করে, তা আমরা অনুকরণ করি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যারা একদা বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করেনি, তারা বলেছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে একটা বটমলেস বাস্কেট হবে। সেই দেশটার থেকেও যেন আমাদের দারিদ্র্যের হার কমাতে হবে।’
‘তাদের চেয়ে অন্তত এক শতাংশ হলেও দারিদ্র্য কমাতে হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তারা উন্নত দেশ হতে পারে কিন্তু আমরা যে পারি সেটা আমাদের প্রমাণ করতে হবে,’- যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শুরুতে সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শোকের মাস আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
সূত্র : বাসস
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ১৮, ২০১৯)