অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে খেলাপি ঋণ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : একের পর এক রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছে দেশের খেলাপি বা কু ঋণ। আগের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানু-মার্চ ) প্রথম বারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়ায় খেলাপি ঋণ। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এই খেলাপি ঋণ পৌঁছে গেছে নতুন উচ্চতায়।
খেলাপি ঋণ নিয়ে প্রস্তুত করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকায়। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে দেশের সব ব্যাংক মালিকদের সাথে বৈঠক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, ফেরত না দেয়ার উদ্দেশে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ওই টাকা তারা ব্যবহার করতে পারবে না। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার করতেই হবে। খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। যা গত ডিসেম্বর ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সে সময় এক লাফে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। তবে এবার (দ্বিতীয় প্রান্তিকে) প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে খেলাপি ঋণ তুলনামূলক কম বাড়লেও তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অবলোপনসহ জুন শেষে খেলাপিঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
আগের বছরের জুন পর্যন্ত অবলোপনবাদে খেলাপি ঋণ ছিল ৯০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
আশার কথা হলো, সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সামান্য কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, জুন প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লেও কমেছে সরকারি ও বিদেশী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ।
তবে শতকরা হিসেবে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার কমেছে। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা জুনে হয়েছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
বন্যা-কৃষিঋণ-বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের থেকে ঋণ আদায়প্রতিবছর জুন ও ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে আসে। শতকরা হারের পাশাপাশি পরিমাণগত হিসেবেও কমে খেলাপি ঋণ। কিন্তু এবার জুন প্রান্তিকে শতকরা হিসেবে খেলাপি ঋণ কমলেও পরিমাণগত হিসেবে বেড়েছে।
মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। জুন শেষে এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা বা ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, গত মার্চ শেষে যা ছিল ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ।
গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। জুন শেষে বিদেশী ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমে হয়েছে ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ সময়ে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে তাদের খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। গত মার্চে এর পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ২৩,২০১৯)