দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: খেলোয়াড় হিসেবে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর সঙ্গে ২০১০ সালে রেফারিং জগতকে আপন করে নিয়েছিলেন, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জয়া চাকমাকে। লেবেল ৩, ২ ও ১ কোর্স করে ন্যাশনাল রেফারি হয়েছেন আগেই, এবার ফিফা রেফারি হওয়ার ফিটনেস টেস্টে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন। এখন শুধু ফিফা থেকে স্বীকৃতি মেলার অপেক্ষা।

আর তা মিললেই জয়া চাকমা হবেন বাংলাদেশের নারী মহিলা ফিফা রেফারি। তার সঙ্গে আরেকটি অর্জনও যোগ যাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবলে। জয়ার সঙ্গে সহকারি রেফারি হিসেবে সালমা ইসলামও আছেন এই তালিকায়।

ফিফার স্বীকৃতি মিললে ২০২০ সালের জন্য এই দুজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় দলের ম্যাচ পরিচালনা করতে পারবেন। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিফার নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাদের। দুজনই ৪ হাজার মিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এছাড়া যেতে হয়েছে আরও কিছু কঠিন পরীক্ষার মধ্যে। সব পরীক্ষা সাফল্যের সঙ্গে উতরে গেছেন জয়া-সালমা।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম নেসারের কণ্ঠে ঝরল তাদের প্রশংসা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘ফিফার দেওয়া পরীক্ষায় দুজনই পাস করেছেন। তাদের আর ফিফা রেফারি ও সহকারি রেফারি হতে কোনও বাধা নেই। আমরা অচিরেই ফিফার কাছে তাদের ফিটনেস টেস্টের রিপোর্টগুলো পাঠাবো। আশা করছি আগামী বছরের আগেই তারা স্বীকৃতি পাবে। এতে করে তাদের ফিফা-এএফসি স্বীকৃত জাতীয় দলের ম্যাচ পরিচালনা করতে সমস্যা হবে না।’

জয়া চাকমার এই পর্যায়ে উঠে আসার গল্পটা একটু অন্যরকম। আগের দুইবার পরীক্ষা দিয়েও ফল অনুকূলে আসেনি। এতেও দমে যাননি রাঙামাটির সাবেক এই খেলোয়াড়। নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে গেছেন। পণ করেছিলেন ফিফা রেফারি হওয়ার। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে গেছেন। এখন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলার অপেক্ষা।

জয়া নিজেই শোনালন সেই গল্প, ‘২০১৩ সালে যখন বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করতে প্রথম শ্রীলঙ্কা যাই, সেখানে গিয়ে দেখি বিভিন্ন দেশের মহিলা রেফারিরা আছেন। কিন্তু আমাদের দেশে সেভাবে কেউ উঠে আসছে না। তখন থেকেই নিজের মধ্যে জিদ চেপে বসে। আমাকে যে করেই হোক সাফল্যের চূড়ায় যেতে হবে। তখন থেকেই ফিফা রেফারি হওয়ার জন্য সাধনা করে যাচ্ছিলাম। অবশেষে ফিফা রেফারি হওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।’

দক্ষিণ এশিয়ায় চারজন নারী ফিফা রেফারি আছেন। ভারতের দুজন এবং নেপাল ও ভুটানের একজন করে। জয়া পঞ্চম হিসেবে তালিকায় নিজের নাম দেখতে চাইছেন, ‘ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের ফিফা রেফারি থাকতে পারলে আমাদের দেশ থেকে কেন থাকতে পারবে না? আমি তো মনে করি আমাকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে। মেয়েদের ফুটবল কিংবা রেফারিং আরও এগিয়ে যাবে। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে মূলধারার ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করব, এটা তো গর্বের বিষয়। এছাড়া মহিলা ফুটবলে রেফারিংয়ের কথা উঠলেই তখন আমার নাম সবার আগে আসবে। এটা চিন্তা করতেই অনেক ভালো লাগছে।’

রাঙামাটির মেয়ে জয়া টানা চার বছর বয়সভিত্তিক ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলেও খেলেছেন। এছাড়া ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিজেএমসির হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন। এই সময় রেফারিংয়ের পাশাপাশি নাম লেখান কোচিংয়েও।

এএফসির বয়সভিত্তিক আসর ছাড়াও ঘরোয়া ফুটবলে বাঁশি বাজানোর অভিজ্ঞতা আছে তার। একই সঙ্গে চলেছে কোচিং কোর্সের কাজও। এএফসি ‘বি’ লাইসেন্স করে এখন বিকেএসপির মেয়েদের কোচ জয়া। সেখানেও পেয়েছেন সাফল্য। তার অধীনে গত নভেম্বরে ভারতে সুব্রত মুখার্জি আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিকেএসপির মেয়েরা জিতেছে শিরোপা।

জয়া এককথায় অলরাউন্ডার। খেলার সঙ্গে লেখাপড়াও চালিয়ে গেছেন পুরোদস্তুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে করেছেন মাস্টার্স। ডিপ্লোমা আছে স্পোর্টস সায়েন্সের ওপরও।

এবার তার সঙ্গে যোগ হতে চলেছে ফিফা রেফারির তকমা। ফিফা রেফারির ব্যাজ হাতে পেলেই এএফসির এলিট প্যানেলের জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবেন জয়া। সব বাধা ডিঙানোর শপথ নিয়েছেন ‘পাহাড়ি কন্যা’। লক্ষ্য যে তার বহুদূর যাওয়ার!

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ২৪,২০১৯)