৪৬বছর পর এরশাদের আসন দখলে নিতে আ.লীগ মরিয়া!
রংপুর প্রতিনিধি: ১৯৭৩ সালের পর রংপুর সদর আসনে আর আওয়ামী লীগ আর জয়ী হতে পারেনি। এবার আসনটিতে জয়ী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে রংপুর সদর আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সিদ্দিক হোসেন। এখন চলছে ২০১৯ সাল। মাঝখানে কেটে গেছে ৪৬টি বছর। এই দীর্ঘ সময় ধরে সদর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া।
এই আসনের এমপি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। কমপক্ষে দেড় ডজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পোস্টার ব্যানার লাগিয়েছেন দেয়ালে দেয়ালে। সড়কে ঝুলিয়েছেন ব্যানার। অনেকেই দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের এত মনোনয়ন প্রত্যাশির ভিড়ে শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পাবেন, সেটা দলই সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে সাধারণ নেতাকর্মী মনে করছেন প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে এই আসনটি বরাবরের মতই জাতীয় পার্টির কাছে চলে যাবে। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীরা যোগ্য ও ত্যাগি নেতাকর্মীদের মনোনয়ন দেয়ার দাবি তুলেছেন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী খালেকুজ্জামান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম রাজু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সাফি, সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম, প্রাক্তন সাংসদ হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, চিকিৎসক নেতা ডা. দেলোয়ার হোসেন, জেলা মহিলা লীগের প্রাক্তন সহ-সভাপতি রোজি রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলশাদ হোসেন, জাতীয় শ্রমিক লীগ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এমএ মজিদসহ আরো বেশ কজন। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশি নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পোস্টার ফেস্টুন লাগিয়ে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন।
কেবল তাই নয়, শোডাউনও হচ্ছে। এর মধ্যে চৌধুরী খালেকুজ্জানের সমর্থনে নগরীতে একটি বিশাল মটর সাইকেল র্যালি অনেকেরই নজর কেড়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই কোন না কোন মনোনয়নপ্রত্যাশি সভা সমাবেশে গিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন।
আওয়ামী লীগের কর্মী রবিউল ইসলাম, যুবলীগ কর্মী মতিনসহ বেশ কজন জানান, প্রায় অর্ধ শতাব্দি ধরে এই আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। আসনটি ফিরে পেতে হলে এখানে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দিতে হবে।
১৯৭৩ সালে এ আসনের প্রথম সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সিদ্দিক হোসেন। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জয় পান বিএনপির রেজাউল হক সরকার রানা। এরপর থেকেই আসনটি জাতীয় পার্টির। ১৯৮৬ সালে শফিকুল গণি স্বপন, ১৯৮৮ সালে মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০১ সালে গোলাম মোহাম্মদ কাদের, ২০০৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ২০০৯-এ (উপনির্বাচন) রওশন এরশাদ, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ আসনে নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু জোটগত কৌশলের কারণে প্রতিবারই তাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছে।’
তিনি মনে করেন এলাকার উন্নয়নে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়া উচিত। জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চায়। তাই এখানে নৌকা প্রতীকে একজন যোগ্য প্রার্থী দেয়া দরকার।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রেজাউল করীম রাজু বলেন, ‘যার সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, দলীয় নেতাকর্মীদের ভালো-মন্দের খোঁজখবর রাখেন, সংসদে গিয়ে রংপুরের উন্নয়নের কথা বলতে পারবেন- তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া উচিত।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সাফি বলেন, ‘এরশাদের অবর্তমানে রংপুর-৩ আসন আর জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হবে না।’
সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল বলেন, ‘আমি মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে দলের জন্য কাজ করি। আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে এলাকার দাবি আদায়ের জন্য সংসদে কাজ করব। তবে নৌকা প্রতীক যাকেই দেয়া হউক তার জন্য কাজ করব।’
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কার বিকল্প নেই। আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশি। দল মনোনয়ন দিলে মানুষের জন্য কাজ করব। মনোনয়ন না পেলেও নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করব।’
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ২৪,২০১৯)