ভারতের ব্যাডমিন্টনের নয়া ইতিহাস লিখলেন সিন্ধু
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ২০১৩ সালে ১৮ বছর বয়সে প্রথম ব্রোঞ্জ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। তারপর থেকে সাত বছরে চার বার কাছাকাছি এসেও বার বার সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রূপো বা ব্রোঞ্জে। প্রকাশ পাড়ুকোন, পুল্লেলা গোপীচন্দ, সাইনা নেহওয়াল ভারতের কিংবদন্তি ব্যাডমিন্টন তারকাদের কেউ পারেননি এই অনন্য সম্মান জিততে। শনিবার সেমিফাইনালে চিনের চেন উফেই-কে উড়িয়ে দিয়েও সেই জন্যই সন্তুষ্ট ছিলেন না সিন্ধু। লক্ষ্য ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনার পদক।
আসলে তিনি জানেন ঠোঁট আর কাপের মাঝের দূরত্ব যতটা, ফাইনালে ওঠা আর সোনার পদক জেতার দূরত্বটাও ততটাই। কিন্তু তৃপ্তি তখনই আসে যখন সেই দূরত্বটা মুছে যায়। আর সেই দূরত্ব মুছতে এ বারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন আট বছর বয়স থেকে ব্যাডমিন্টন খেলা সিন্ধু। তাঁর বাবা পিভি রমনা ছিলেন ভলিবল প্লেয়ার। তাই খেলোয়াড় জীবনের লড়াই তিনি ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন। রবিবারের জয়ের পর অর্জুন পুরস্কার পাওয়া বাবাও গর্ব বোধ করবেন মেয়েকে নিয়ে।
পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চির সিন্ধু ফাইনালে উঠেছেন বহু টুর্নামেন্টেই। কিন্তু ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে গোল্ড কোস্টে মিক্সড ডবলসে সোনা জিতলেও সিঙ্গলস ফাইনালে জয় থেকে গিয়েছে অধরাই। ২০১৬ সালে ব্রাজিলে অলিম্পিকের ফাইনালে স্পেনের ক্যারোলিন মারিনের কাছে হার শুধু হায়দরাবাদের সিন্ধুর নয় হৃদয় ভেঙে ছিল গোটা দেশের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও শেষ দু’বছর হারতে হয়েছে ফাইনালে। তার মধ্যে ২০১৭ সালে আজকের জাপানি প্রতিদ্বন্দ্বী ওকুহারাই ছিলেন নেটের ওপারে। ১৯-২১, ২২-২০ ও ২০-২২ –এর লম্বা লড়াই-এর শেষে হার মানতে হয় গোপীচন্দের ছাত্রীকে। পরের বছর আবার ওঠেন ফাইনালে। এবারে মুখোমুখি হন সেই মারিনের। অলিম্পিক্সের দুঃস্বপ্ন যেন তাড়া করছিল সিন্ধুকে। ২১-১৯, ২১-১০ সেটে হার মানেন তিনি। তাঁকে যেন উড়িয়েই দিলেন অপ্রতিরোধ্য স্প্যানিশ শাটলার।
তবে এ বারে শুরু থেকেই যেন পাখির চোখ করে নিয়েছিলেন সোনার পদকটাকে। হায়দরাবাদের আর এক মেয়ে নেহওয়াল তৃতীয় রাউন্ডে বিদায় নিলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি সিন্ধু। প্রথম দুই রাউন্ডে দাঁড়াতেই দেননি তাইওয়ানের পাই এবং আমেরিকার ঝ্যাংকে। স্ট্রেট সেটে হারান তাঁদের। প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েন কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে তিনি মুখোমুখি হন বিশ্বের দু’নম্বর তাইওয়ানের তাই জু-ইং-এর। প্রথম গেমে ১২-২১ হারলেও পরের দুটি গেম লড়ে জিতে নেন তিনি (২৩-২১, ২১-১৯)। সেমিফাইনালে সামনে আসেন বিশ্বের তিন নম্বর চেন উফেই। ২০১৭ সালে তাঁকে হারিয়েই ফাইনালে পৌঁছে ছিলেন তিনি। সেই আত্মবিশ্বাস দেখা গেল শনিবারও।
২১-৭, ২১-১৪ ফলে উড়িয়ে দেন চিনের প্রাচীর। কিন্তু জিতে বলেন ‘সন্তুষ্ট’ নন। আসলে সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন সিন্ধু। জানেন গত দু’বার ফিরতে হয়েছিল ফাইনাল থেকে সোনা হেরে। অগ্রজ সাইনাকে ২০১৫ সালে জাকার্তায় হারতে দেখেছেন। চ্যাম্পিয়ন হতে আসা সিন্ধু তখন নিজেকে তৈরি করছেন আসল লড়াই-এর জন্য। কোচ কিম জি হুইনের প্রশিক্ষণে যেন আরও ধারালো এক সিন্ধুকে দেখছে ভারতবর্ষ। গোপীচন্দের ছাত্রী যেন তাঁর তূণে যোগ করেছেন আরও নতুন অস্ত্র।
সেই নতুন ফিনিক্স পাখিকেই যেন চোখে পড়ল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। রবিবার জাপানের ওকুহারাকে হেলায় হারিয়ে ইতিহাস গড়লেন গোপীচন্দের ছাত্রী। বিশ্ব ক্রমতালিকায় পাঁচ নম্বর সিন্ধুর থেকে এক ধাপ এগিয়ে ছিল ওকুহারা। কিন্তু ফাইনালের ফল যেন (২১-৭, ২১-৭) সেই কথা বলছেনা। প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতেই দিলেন না তিনি। মাত্র ৩৮ মিনিটে শেষ হয়ে গেল বহু অপেক্ষার ফাইনাল। কখনও দুরন্ত স্ম্যাশ আবার কখনও লম্বা র্যালি। ওকুহারার থেকে লম্বা সিন্ধু দৌড় করাতে থাকলেন প্রতিপক্ষকে। কখনও ম্যাচে ফিরতেই পারলেন না বিশ্বের চার নম্বর জাপানি শাটলার। বহু কাঙ্ক্ষিত জয় পেলেন ভারতের পুসেরেলা ভেঙ্কটা সিন্ধু।
প্রথম বার ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চে বাজল ‘জন গণ মন’। ইতিহাস রচিত হল বাসেলে।
(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ২৫,২০১৯)