বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরে সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শায় রাতের আঁধারে বাসায় ঢুকে এক নারীকে (৩০) নিপীড়নের অভিযোগে পুলিশের উপপরিদর্শকসহ (এসআই) চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে শার্শা থানায় মামলা করলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে।

গত সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে এ নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শার্শার চটকাপোতা গ্রামের কামরুল ইসলাম (৪০), একই উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের ওমর আলী (৫০) ও আবদুল লতিফ (৪৮)।

তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই খায়রুল আলমকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি শার্শা থানার গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন। খায়রুলের বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায়। তবে পুলিশ বলছেন এই খায়রুল অভিযুক্ত সেই খায়রুল নয়।

ওই নারীর দাবি, নিপীড়নের সময় পুলিশ সদস্যসহ চারজন উপস্থিত ছিলেন। এসআই খায়রুল ও সোর্স কামরুল তাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলছেন, মঙ্গলবার বিকালে ওই নারীর সামনে এসআই খায়রুলসহ চারজনকে হাজির করা হয়। তিনি এসআই খায়রুল ছাড়া অপর তিনজনকে চিনতে পেরেছেন।

তবে ওই নারী জানান, তার স্বামী একসময় চোরাচালানি ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল, বর্তমানে কৃষিকাজ করেন। ৯ দিন আগে এসআই খায়রুল বাড়ি থেকে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যান। পরে এসআই খায়রুল তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় ওই নারীর স্বামীর কাছে ৫০ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া গেছে বলে মামলা দিয়ে আদালতে তাকে চালান করা হয়।

ওই নারীর অভিযোগ, সোমবার রাত আড়াইটার দিকে এসআই খায়রুল, তার সোর্স কামরুল ও গ্রামের আরও তিন থেকে চারজন বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করেন। এত রাতে দরজা খুলতে না চাইলেও তারা আমার স্বামীর নামে মামলা দেবেন বলে হুমকি দেন। তখন আমি দরজা খুলে দিই। এ সময় খায়রুল আবারও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না দিলে ৫৪ ধারায় মামলা করার হুমকি দেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার ঝগড় হয়। একপর্যায়ে খায়রুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এর পর তিনি ও কামরুল দুজন মিলে আমাকে ধর্ষণ করে।

ওই নারী আরও বলেন, এসআই খায়রুলসহ অন্যরা চলে যাওয়ার পর ঘটনাটি প্রতিবেশীদের জানাই। প্রতিবেশীরা আমাকে মামলা করার পরামর্শ দেন। মামলা করতে হলে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করাতে হবে। এ কারণে আমি থানায় না নিয়ে সোজা যশোর জেনারেল হাসপাতালে যাই।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফ আহম্মেদ জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ওই নারী জরুরি বিভাগে আসেন। অভিযোগ শুনে তাকে পুলিশের মাধ্যমে আসার জন্য বলা হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ওই নারীকে পুলিশ সুপারের কাছে নিয়ে যান।

শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান জানান, ওই নারী তিনজনের নাম উল্লেখসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা করেছেন।

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। পুলিশ সদস্য বলে তদন্তে কোনো ছাড়া দেয়া হবে না। তবে ওই নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষা জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার আরিফ আহম্মেদ জানান, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন আসার পর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

বুধবার খুলনার ডিআইজি ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন বিষয়টি তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ০৪ ,২০১৯)