আর্থিক খাতে জালিয়াতি বন্ধে তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশে গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল জালিয়াতির বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে ব্যাংকের লেনদেনের বৈধতা নির্ধারণ, অর্থ জালিয়াতি, মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নসহ অর্থনৈতিক অপরাধ রোধে ইন্টার অপারেটেবল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (আইডিপিপি) তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আইডিপিপি বাস্তবায়নে আইনি ও কারিগরি দিক-নির্দেশনা তৈরি করতে ইতিমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ফিনটেক এবং ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুসিভ আর্থিক সেবাভুক্তির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা বিষয়ক এক বৈঠকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে নামকরা ব্যাংকের এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাকিং করে টাকা তোলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। গত জুন মাসে সিস্টেম হ্যাকিং করে টাকা তোলার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ছয় ইউক্রেনের নাগরিক।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বৈঠকে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইডিপিপির মাধ্যমে একটি ইন্টার অপারেটেবল ডিজিটাল ওয়ালেট পরিচালনা করবে যা বিভিন্ন খাতে সহজে অর্থনৈতিক লেনদেন করতে সহায়তা করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ বিষয়ে বলেছেন, সমাজের সব স্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে সেই ঝুঁকি কমবে। ব্যাংকগুলো এখনো পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হয়নি। নো ইউর কাস্টমার, এটাকে বলে ইকেওয়াইসি। অর্থাৎ ইলেক্ট্রনিক নো-ইউর কাস্টমার।
তিনি বলেন, এটা আমরা পুশ করছি আইসিটি ডিভিশন থেকে, বাংলাদেশ ব্যাংকে। এই ইকেওয়াইসি যেন তারা প্রবর্তন করে। এখনো কোনো ব্যাংকেই ইকেওয়াইসি প্রবর্তন করা হয়নি।
এছাড়া যেমন ক্রেডিট রিপোর্ট প্রতিটি ব্যাংকে প্রত্যেক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের একটি করে ক্রেডিট রিপোর্ট থাকতে হবে। এটা যদি অনলাইনে থাকে তাহলে কেউ লোন নিয়ে আর্থিক জালিয়াতি করতে পারবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন সুসংহত, ডিজিটালাইজেশন। যেহেতু দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তাই আমরা নজর দিচ্ছি ইকেওয়াইসির দিকে। ২০২১ সালে আমরা লেস ক্যাশ সোসাইটির দিকে যাব।
ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল, কেনাকাটা বা ই-কমার্সে ডিজিটাল মানি প্রবর্তনের দিকে যেতে চাচ্ছি। এর বাইরে সাইবার সিকিউরিটির দিকে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, এই ধরনের অব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির মাধ্যমেই মোকাবিলা করা সম্ভব।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগের ব্যাংক হিসাব আছে, কিংবা তারা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিয়ে থাকে। ২০১৪ সালে এই হার ছিল মাত্র ৩১ শতাংশ (গ্লোবাল ফিনডেক্স বা বৈশ্বিক আর্থিক সূচক ২০১৭)।
ব্যবহারভোগীর এই বৃদ্ধির পরও ৫৮ মিলিয়ন বা পাঁচ কোটি আট লাখ মানুষের এখনো ব্যাংকে কোনো চলতি বা জমা হিসাব, ইনস্যুরেন্স পলিসি, ঋণ বা ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ নেই। এতে করে তারা উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ পুরুষের বিপরীতে মাত্র ৩৬ শতাংশ নারীর ব্যাংক হিসাব আছে। এই ব্যবধানের হার ২৯ শতাংশ (বৈশ্বিক আর্থিক সূচক)।
সূত্র জানায়, ব্যাংকিং সেবা যেন প্রতিটি মানুষ উপভোগ করতে পারে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্য সামনে রেখেই ইন্টার অপারেটেবল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম (আইডিপিপি) তৈরির কাজ হচ্ছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ০৯,২০১৯)