‘ঈদ খরচ’ হিসেবে ওই টাকা দাবি করেছিলেন রাব্বানী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা থেকে ৪-৬ শতাংশ চাঁদা দাবি করেছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
বুধবার সন্ধ্যায় ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার বাসভবনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গত ৮ আগস্ট রাতে আমার বাসভবনে দেখা করে চাঁদা চান উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থের ৪-৬ শতাংশ চাঁদা শোভন ও রাব্বানী।
উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছে- এমন কোম্পানির কাছ থেকে ভিসিকে টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন শোভন ও রাব্বানী। তাতে রাজি না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই দুই নেতা তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন বলে জানান জাবি ভিসি ।
এমন সব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসলেও গতকাল (শুক্রবার) দেশের একটি জাতীয় ইংরেজী দৈনিকের কাছে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, ঈদুল আজহার আগে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে তারা টাকা চেয়েছিলাম। আর ‘ঈদের খরচ’ হিসেবে ওই টাকা দাবি করেছিলাম।’
সে টাকা জাবির উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থের ৪-৬ শতাংশ কি না বা সে টাকার পরিমাণটি কতো ছিলো তা জানাতে রাজি হননি রাব্বানী।
উল্লেখ্য, পুরো প্রকল্প তহবিলের ছয় শতাংশ মানে হলো ৮৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ।
এ বিষয়ে সেই দৈনিককে জাবি ভিসি বলেন, ‘চাঁদার পরিমাণ এতো চাওয়ায় আমি তাদের বলি এতো টাকা দিয়ে দিলে ভবন বানাবো কী দিয়ে?’
জবাবে রাব্বানী জানায়, ‘এখনকার দিনে ১-২ শতাংশের আলাপ কোথাও নেই। ৪-৬ শতাংশ ছাড়া কি হয়?...এটি একটি বড় প্রকল্প। আপনি আমাদের সহায়তা করলে, আমরাও আপনাকে সহযোগিতা করব।’
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে চাঁদা না দিলেও ভিসি জাবি শাখা ছাত্রলীগকে ঠিকই ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাব্বানী।
জাবির উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা হয়ে না দাঁড়ানোর জন্য এ টাকা দেয়া হয়েছে বলি দাবি শোভন-রাব্বানীর।
তবে তাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ মিথ্যা গল্পের ফাঁদ রচনা করেছে বলে আজ (শনিবার) সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন ভিসি ফারজানা ইসলাম।
বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও আচার্যকে অনুরোধ করবেন বলে জানান তিনি।
চাঁদা দাবি করেই ক্ষান্ত হননি রাব্বানী, নিজের পছন্দ মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতেও চাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম।
তিনি বলেন, গত ২৬ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে আমার সঙ্গে দেখা করে নিজের পছন্দ মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে চাপ দেন রাব্বানী। এসময় শোভনসহ অন্য ছাত্রলীগ নেতারও রাব্বানীর সঙ্গে ছিলেন।
এছাড়াও হাসপাতালের নীচে অনেক ছাত্রলীগকর্মী অপেক্ষা করছিল বলেও জানান তিনি।
এদিকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিষয়ে জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন রাব্বানী। আমাদের না জানিয়েই গত ৮ আগস্ট তিনি ভিসির সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘রাব্বানী ভাই আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এসব কথা বলেছেন। তিনি যেখান থেকে তথ্য পেয়েছেন, সেটি ভুল তথ্য ছিল। এটি ভাইয়ের তথ্যগত ভুল। টাকা পাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
এ বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভিসি ফারজানা।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেন, ওরা (শোভন-রাব্বানী) তোমাকেও কষ্ট দিল।’
শোভন-রাব্বানীর চাঁদা চাওয়া ও ঠিকাদার নিয়োগে চাপ দেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে আগে জানাননি কেনো? এমন প্রশ্নে ভিসি ফারজানা ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও সচিবদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা ও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রথমদিকে তাকে জানানো সম্ভব হয়নি।
এদিকে ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনামে ওঠে আসায় গত রোববার রাতে উপাচার্যের বাসভবনে নিজের চারজন সমর্থককে ক্ষমা চাইতে পাঠান রাব্বানী। তবে উপাচার্য তাদের সঙ্গে দেখা করেননি।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ১৪,২০১৯)