গ্রেফতার হওয়ার পরেও র্যাবকে ১০ কোটি টাকার অফার দেন জি কে শামীম
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: টেন্ডার, চাঁদা ও অস্ত্রবাজি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা জি কে শামীম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে নানান ফন্দিফিকির খোঁজেন। তিনি প্রভাবশালীসহ নানা মহলে জোর লবিং চালান। মোটা অংকের টাকা অফার দেন বিভিন্নজনকে। এমনকি হাতে হাতকড়া পড়ানোর পরও র্যাবকে ১০ কোটি টাকার প্রস্তাব করেন তাকে ছেড়ে দিতে।
অভিযানে অংশ নেয়া এক র্যাব সদস্য জানান, হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানোর পর জি কে শামীম তদবিরের হাল ছেড়ে দেন। এবার তিনি অভিযানে উপস্থিত র্যাব কর্মকর্তাদের ম্যানেজের কৌশল নেন। একজন র্যাব কর্মকর্তাকে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ১০ কোটি টাকার অফার দেন।
জি কে শামীম বলেন, ‘আমাকে ছেড়ে দিন। এখনই ১০ কোটি টাকা দিচ্ছি। চাইলে আরও দেব। যেখানে যেভাবে বলবেন সেখানে টাকা পৌঁছে দেব। শুধু আমাকে এবারের মতো ছেড়ে দিন।’
কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভনেও কাজ হচ্ছে না দেখে জি কে শামীম অসুস্থতার ভান করেন। বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তখন তাকে অফিস কক্ষেরই একটি চেয়ারে বসার অনুমতি দেয়া হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর শামীমকে নিচে নামিয়ে আনা হলেও র্যাবের গাড়িতে উঠতে তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। শামীম তার কোটি টাকা মূল্যের আলফার্ড গাড়িতে করে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
কিন্তু তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। বাইরে দাঁড়ানো পিকআপে তুলে তাকে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
সূত্র জানায়, জি কে শামীম সব সময় বিশেষ নিরাপত্তা বহর নিয়ে চলাফেরা করতেন। তার গাড়িবহরে ১০-১২টি মোটরসাইকেল, দুটি মাইক্রোবাস, পুলিশের ব্যবহৃত ট্রাফিক সরঞ্জাম ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করা হতো।
এছাড়া শামীমের বডিগার্ডদের গায়ে বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্স কর্তৃক ব্যবহৃত জ্যাকেট সাদৃশ্য পোশাক দেখা যায়। যা রীতিমতো বেআইনি।
র্যাব বলছে, বেশ কয়েকদিন আগ থেকেই জি কে শামীমের টেন্ডারবাজি ও অর্থপাচারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য যাচাইয়ের পর শামীমকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আটকে ফেলা হয় প্রভাবশালী এই ঠিকাদারকে র্যাবের জালে। শুক্রবার ভোরে র্যাবের একটি গোয়েন্দা টিম ছদ্মবেশে শামীমের বাড়িতে হাজির হয়। কিন্তু বাড়ির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। দরজা খুলতে বলায় ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়।
এ সময় র্যাব কর্মকর্তারা কৌশলগত কারণে পরিচয় গোপন করে ভিন্ন পরিচয়ে দরজা খুলতে বলেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে র্যাব সদস্যরা ভেতরে ঢুকে পড়েন। প্রথমেই তার অস্ত্রধারী বডিগার্ডদের আটক করা হয়।
এরপর জি কে শামীমের কক্ষে ঢুকে পড়েন র্যাব সদস্যরা। নিজের অফিস কক্ষে হঠাৎ র্যাবের টিম দেখে হতভম্ব হন তিনি। বিচলিত হয়ে প্রভাবশালীদের ফোন করতে শুরু করেন।
জি কে শামীমের ফোনে বেশির ভাগ প্রভাবশালী সাড়া না দিলেও কেউ কেউ শামীমকে ছেড়ে দেয়ার জন্য র্যাব কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ থাকায় কোনো অনুরোধই কাজে আসেনি। সকাল ৯টার দিকে শামীমের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেন র্যাব সদস্যরা।
এরপর তার বাসায় তল্লাশি শুরু হয়। তার অফিস কক্ষসহ বাসার বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল অঙ্কের নগদ টাকা, ৮টি ব্যাংকের চেকবই, ২শ’ কোটি টাকার এফডিআর, অস্ত্র, গুলি ও মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের নিকেতনের কার্যালয় থেকে সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেফতারের পর শামীমকে র্যাব-১ এর কার্যালয়ে নেয়া হয়। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন শামীম।
‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের’ সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দেন তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার দুপুরে সাত দেহরক্ষীসহ শামীমকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে এ থানায় অস্ত্র, মাদক এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আলাদা তিনটি মামলা করে র্যাব।
তাকে দুটি মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অস্ত্র মামলায় শামীমের সাত দেহরক্ষীরও চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তারের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শামীমের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনের গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ।
শুনানি শেষে অস্ত্র মামলায় ৫ দিন এবং মাদক মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর অস্ত্র আইনের মামলায় দেহরক্ষী প্রত্যেকের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড চাইলেও চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২২,২০১৯)