দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: মুখ খুলতে শুরু করেছেন গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এস এম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জিকে শামীম ও কৃষক লীগ নেতা কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ। আর অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার অভিযোগে এখনো পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।

যুবলীগ নেতা খালেদ ও জিকে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অপরদিকে ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগ নেতা খালেদ ও জিকে শামীম রিমান্ডের প্রথম দিন নিজেদেরকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করার চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীতে তথ্য প্রমাণ তাদের সামনে উপস্থাপন করা হলে তারা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নেন। ঐ দুই নেতা জানিয়েছেন, তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছেন প্রভাবশালী নেতারা। তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়েই তারা নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছেন।

মামলা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ওরা যাদের নাম বলেছেন, তাদের নাম দেখে তারা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছেন। সবার কাছে এসব নেতাদের একটা ক্লিন ইমেজ আছে। অথচ এরাই খালেদ ও শামীমকে পরেক্ষাভাবে সহায়তা করেছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন মোটা অংকের টাকা। ঐ কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে ক্যাসিনো এবং চাঁদাবাজি যারা নিয়ন্ত্রণ করত, তাদের অনেক নামই গ্রেফতারকৃতরা প্রকাশ করেছেন। পর্যায়ক্রমে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আসামিরা অন্য পাঁচটি মামলার মত আসামি না। ফলে এদের দেওয়া তথ্যগুলো যেমন পর্যাপ্ত যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি যাদের নাম বলেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে গেলে আরো কিছু কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে।

কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের ব্যাপারে ধানমন্ডি থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, শফিকুল আলম ফিরোজ থানায় রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ধানমন্ডির থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফিরোজ জানিয়েছেন, জুয়ার সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ক্লাবের সভাপতি হিসেবে জুয়ার টেবিল তিনি ভাড়া দিয়েছেন।

তিনি জানান, কলাবাগান ক্লাবের রামির টেবিল চালাতেন সাদেক নামে একজন। তাকে সহযোগিতা করতেন সাজু। এক পর্যায়ে তার কাছে সাদেকের ঠিকানা চাওয়া হয়। এসময় ফিরোজ জানান, সাদেক ধানমন্ডি থাকেন। তবে বাসার ঠিকানা তিনি জানেন না বলে জানান।

পুলিশ কর্মকর্তারা সাদেকের মোবাইল নম্বর চাইলে ফিরোজ তা সরবরাহ করেন। ক্যাসিনো সম্পর্কে ফিরোজ জানান, সেখানে প্রতিদিন বাকারা খেলা হতো। কিন্তু এখন সেটা চলে না। ভাড়া বাকি থাকায় কারবারিদের বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। ভাড়া বাকি থাকায় তাদের জিনিসপত্র এখনো ক্লাবে রয়ে গেছে।

গুলশান থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা দুই মামলায় গত বুধবার পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডে নেয় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। অপরদিকে গত শনিবার জি কে শামীমকে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। একই দিন ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক মামলায় পুলিশ ১০ রিমান্ডে নিয়েছে কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।

যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট নজরদারিতে: সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত আসামি এবং প্রাপ্ত তথ্য মতে ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনার অভিযোগে এখনো পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তবে কোনো অবস্থায় সম্রাট ও তার সহযোগিতারা যাতে দেশত্যাগ না করতে পরে সে ব্যাপারে দেশের সব বিমান বন্দর ও সীমান্তে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।

ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বিমান বন্দরে পার করে দিতেন শীর্ষ কাস্টমসর গোয়েন্দা কর্মকর্তা: জুয়ার বোর্ডসহ ক্যাসিনোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গত কয়েক বছরে দেশে প্রবেশ করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে। ক্যাসিনোর সরঞ্জাম যাতে নির্বিঘ্নে বের হতে পারে তা তদারকি করতেন কাস্টমসের গোয়েন্দা শাখার এক শীর্ষ কর্মকর্তা। তার নির্দেশেই বিমান বন্দরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ক্যাসিনোর সরঞ্জাম বিমানবন্দর পার করে দিয়েছে। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৩,২০১৯)