দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ‘টেন্ডার কিং’ হিসেবে পরিচিত জি কে শামীমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে’কে ওএসডি করেছে মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোসা. সুরাইয়া বেগম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ঢাকা গণপূর্ত মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমান কর্মস্থল) উৎপল কুমার দে’কে গণপূর্ত অধিদফতরে (রিজার্ভ) ন্যস্ত করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (গণপূর্ত) ক্যাডারের এ কর্মকর্তাকে পদলিপূর্বক পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত তার নামের পার্শ্বে বর্ণিত পদ/কর্মস্থলে পদায়ন করা হল। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

পূর্ত মন্ত্রণালয়ের বড় বড় টেন্ডার বাগিয়ে আনতেন জি কে শামীম। এর জন্য আমলা, প্রকৌশলীদের বিপুল টাকাসহ দামি উপঢৌকনও দিতেন শামীম। এ বিষয়ে মঙ্গলবারই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, সরকারের প্রায় সব ঠিকাদারি কাজ জি কে শামীম কীভাবে পেয়েছে- তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জি কে শামীমের এসব দরপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে পূর্তমন্ত্রণায়লের কেউ যদি জড়িত থাকে সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। এক্ষেত্রে কারো দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না।

এরমধ্যেই গণপূর্তের এ প্রকৌশলীকে ওএসডি করা হল।

এদিকে র‌্যাব বলছে, জি কে শামীমের সঙ্গে সমাজের প্রভাবশালী অনেকের হট কানেকশন ছিল। রাজনৈতিক পদ-পদবিধারী নেতা ছাড়াও ৫-৬ জন মন্ত্রীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল ওপেন সিক্রেট।

তার ৩টি মোবাইল ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। কাজ পেতে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের পাশাপাশি সচিব থেকে শুরু করে প্রকৌশলীদের কাউকেই প্রাপ্য কমিশন থেকে বঞ্চিত করতেন না তিনি।

র‌্যাব আরও জানায়, জি কে শামীম অভিনব উপায়ে টেন্ডারবাজি করতেন। সম্প্রতি ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু হওয়ায় মূলত জি কে শামীমের মতো ঠিকাদারদের আরও সুবিধা হয়েছে।

কারণ আগে থেকেই দরপত্রে এমন শর্ত যোগ করা হয় যাতে পূর্বনির্ধারিত ঠিকাদার হিসেবে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানই কাজ পায়। এজন্য সংশ্লিষ্ট দফতর ও অধিদফতরের উচ্চপর্যায়ে নীতিনির্ধারকরা নির্ধারিত রেটে কমিশন নিতেন।

দীর্ঘদিন ধরে এমন কমিশন লেনদেনের ফলে জি কে শামীম অনেক কর্মকর্তারই আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ফলে পূর্ত সংক্রান্ত মেগা প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজের সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবিপিএল যুক্ত থাকে।

গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তাদেরও টাকা দিয়ে কার্য উদ্ধার করেছেন শামীম। প্রকল্প কাজের সময় ও ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে নিতেও ঘুষ খাওয়া কর্মকর্তারা তাকে সহায়তা করতেন।

র‌্যাবের হাতে আটকের পর ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম জানান, পূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তাদের পেছনে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতেন তিনি। তার বদলে শত শত কোটি টাকার কাজ পেতেন।

এদিকে জিকে শামীমের তিনটি মোবাইল ফোন থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সূত্র জানায়, সেই তিন মোবাইলে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, শামীমের সিন্ডিকেটের ২২ জন ঠিকাদারের নাম জেনেছে তদন্তকারীরা। গণপূর্ত অধিদফতরের ২০ কর্মকর্তার সঙ্গে শামীমের হটলাইন ছিল বলেও জানা গেছে।

এ ছাড়া শুক্রবারের অভিযানে শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত এক অফিসিয়াল খাতায় তার অবৈধ লেনদেনসংক্রান্ত হিসাব পাওয়া গেছে।

ওই খাতায় মেগাপ্রকল্পের বেশ কয়েকটি কাজ পেতে টেন্ডার মূল্যের ১-৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন হিসেবে যাদের নগদ দেয়া হয়েছে, তাদের নাম লেখা রয়েছে।

সেখানে যুবলীগ, ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে প্রভাবশালী অনেক রাজনৈতিক নেতার নাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

তবে তদন্তের স্বার্থে গণমাধ্যমে আপাতত এসব নেতার নাম প্রকাশ করেননি তদন্ত কর্মকর্তারা।

তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের’ সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দেন শামীম।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার দুপুরে সাত দেহরক্ষীসহ শামীমকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে এ থানায় অস্ত্র, মাদক এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আলাদা তিনটি মামলা করে র্যা ব।

তাকে দুটি মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অস্ত্র মামলায় শামীমের সাত দেহরক্ষীরও চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তারের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শামীমের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনের গুলশান থানায় করা মামলায় সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ।

শুনানি শেষে অস্ত্র মামলায় ৫ দিন এবং মাদক মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর অস্ত্র আইনের মামলায় দেহরক্ষী প্রত্যেকের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড চাইলেও চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৪,২০১৯)