দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ক্লাব-ক্যাসিনো ও বাসাবাড়ির লকারে মিলছে কোটি কোটি টাকা। রাজনৈতিক নেতারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাসহ আটক হচ্ছেন। অবৈধ ক্যাসিনো কারবার নিয়ে চলমান এ ডামাডোলের মধ্যেই সংবাদের খোরাক হয়েছেন জনৈক এরশাদ আলী। জানা গেছে, ৫টি ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি উধাও হয়ে গেছেন। অর্থ আদায়ে এবি ব্যাংকের ঠুকে দেওয়া মামলায় এখন তিনি আসামি; তার মাথার ওপর ঝুলছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।

একাধিক সূত্রের খবর, চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাকুল্যে ৩০০ কোটি টাকা নিয়েছেন রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী এরশাদ আলী। এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশন নামে তার প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কাকরাইলের এবি ব্যাংকের শুধু ইসলামী ব্যাংকিং শাখা থেকেই তিনি নিয়েছেন দেড়শ কোটি টাকা। এ ছাড়া সাউথবাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে ৮৫ কোটি, ব্র্যাক থেকে ১৫ কোটি ৫ লাখ, সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ৬ কোটি এবং ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছেন ২৯ কোটি টাকা। এর বাইরেও কিছু ব্যাংকে তার ঋণ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, ২০১০ সাল থেকে এরশাদ আলী এবি ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং শাখার গ্রাহক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ব্যাংকটি থেকে পর্যায়ক্রমে ঋণ নিয়েছেন। মাঝে মধ্যে পরিশোধও করেছেন। এভাবেই চলছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের পর তিনি ঋণখেলাপি হয়ে যান। এ তালিকা থেকে নাম কাটাতে ওই বছরই দুবার ঋণ পুনঃতফসিল করেন। এর পর অন্যান্য ব্যাংক থেকেও নতুন করে ঋণ নেন। তার কাছে এবি ব্যাংকের মোট পাওনা ১৪৭ কোটি টাকার পুরোটাই এখন খেলাপি। পাওনা আদায়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এনআই অ্যাক্টের অধীনে তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি মামলায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ১৭ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলায় তার জামিন বাতিল হয়ে যায়। পরোয়ানা থাকায় তাকে আটকের চেষ্টা করছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গত সোমবার রাতেও ধানমন্ডিতে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, থানায় এরশাদ আলীর নামে ওয়ারেন্ট এসেছে। তাই তাকে আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

এরশাদ আলীর ঋণের বিষয়ে এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তা অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। কিন্তু বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও এরশাদ আলী ফেরত দেননি। তাই মামলা হয়েছে। টাকা ফেরত পেতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের কর্ণধার এরশাদ আলীর বাড়ী রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার রানীনগরে। বাংলামোটরের নাসির ট্রেড সেন্টারে তার অফিস; থাকেন ধানমন্ডির ৭/এ হোল্ডিংয়ের নিজ বাসায়। কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে অপরপ্রান্ত থেকে জনৈক নারী জানান, এরশাদ আলী বাসায় নেই। ওই নারীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিরুত্তর থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর একজন এ প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে জানান, তার নাম জাকির হোসেন। তিনি এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের ম্যানেজার। এরশাদ আলী সম্পর্কে জানতে চাইলে কথিত জাকির হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব ভীষণ অসুস্থ।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৫,২০১৯)