আওয়ামী লীগের শতাধিক অভিযুক্ত, বিদেশে ৪০
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2019/09/25/rrrr.jpg)
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা নিঁখোজ রয়েছেন। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। এদের কাউকে কাউকে র্যাব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হণ্যে হয়ে খুঁজছে। কিন্তু তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, শতাধিক নেতার মধ্যে অন্তত ৪০জন বিদেশ চলে গেছেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বাকিরা দেশেই কোথাও ঘাপটি মেরে আছেন। তারা যেন বিদেশ যেতে না পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, ক্যাসিনো বাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং যুবলীগ নেতা আলহাজ্ব এ,কে,এম, মুমিনুল হক সাঈদকে পুলিশ খুঁজছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য আছে যে, সাঈদ এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। শুদ্ধি অভিযানের প্রথম দিনই সিঙ্গাপুরে তিনি পালিয়ে যান বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে। গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভুইয়াকে পুলিশ খুঁজছে।
এই দুজনও দেশ ত্যাগ করেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছেন। শ্রমিক লীগের নেতা ক্যাসিনো ব্যবসায় অভিযুক্ত কাজী জাকারিয়াকে পুলিশ খুঁজছে। তিনি উত্তরা পশ্চিম থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। যদিও এখন পর্যন্ত তার অবস্থান জানা সম্ভব হয়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন এবং দেশেই অবস্থান করছেন। যুবলীগের আইসিটি বিষয়ক সম্পাদক এবং টেন্ডার বাণিজ্যের অন্যতম হোতা মো. শফিকুল ইসলামকেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা খুঁজছে। শফিকুল ইসলামও বিদেশ যেতে পারেননি বলে মনে করছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ফালুর একসময়কার ক্যাডার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম পরিচালক লোকমান হোসেন ভুঁইয়াকেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা খুঁজছে। তিনিও গা ঢাকা দিয়েছেন।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মনে করছে, তিনিও বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ৬০ থেকে ৭০ জন যারা দেশে আছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। যখনই সুযোগ পাওয়া যাবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। আর যারা বিদেশ চলে গেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং মামলায় তারা যখন ওয়ান্টেড হবে তখন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। আবার অভিযুক্ত নয় এমন অনেক আওয়ামী লীগের নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বীকার করেছেন যে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদেরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কোথায় আছেন সে সম্পর্কে কোন তথ্য ওবায়দুল কাদেরের কাছে নাই। ওবায়দুল কাদের মনে করেন যে, তারা সবাই যে অভিযুক্ত এমনটা নয়। অনেকে ভয় পেয়ে আত্মগোপন করেছেন বা পালিয়ে গেছেন বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ই সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহীর কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস এবং ক্যাডার রাজনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ওইদিনই তিনি শুদ্ধি অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের অপসারণের মাধ্যমে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল। ওইদিনই তিনি যুবলীগের অনেকে মনস্টার হয়ে উঠেছেন বলে ঘোষণা দেন। এই সময় যারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের অনেকেই ওইসময়েই দেশত্যাগ করেছেন গোয়েন্দাদের হাতে আছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আছে।
সেই সময় শুদ্ধি অভিযানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল না এবং তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো ছিল সেই অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষনেতা বলেছেন যে, এ বছরের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে ফিরলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে একটি ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়। সেই ফাইলে পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিবরণ ছিল। প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট থেকে তাঁর নিজস্ব টীম দিয়ে এইসব অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখেন। সেখান থেকে তিনি ১৭৩জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পান।
এই ১৭৩ জনের বিরুদ্ধেই বর্তমান পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা হবে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। তবে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা গ্রেপ্তার করা হবে তারা যদি তাদের সঙ্গে অন্যকারও সংশ্লিষ্টতার কথা বলেন তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এই অভিযান একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত চলবে। কিন্তু কতদিন চলবে তা ভারত সফর থেকে ফিরে আসার পর চূড়ান্ত হবে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৫,২০১৯)