দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগে চলমান শুদ্ধি অভিযানে শুধু আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর পুত্রদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ উঠেছে। এই পুত্রদের বিরুদ্ধেও একই রকমভাবে টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অন্যের সম্পত্তি দখলসহ নানারকম অভিযোগ এসেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ সমস্ত অভিযোগের সারসংক্ষেপ দিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে যাওয়ার আগেই এই অভিযোগগুলো আরও খতিয়ে দেখে সুর্নির্দিষ্টভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে যে এইসব অভিযোগগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আগে আওয়ামী লীগকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আওয়ামী লীগ, দুর্নীতিমুক্ত, কলুষমুক্ত আওয়ামী লীগ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এজন্যই তিনি এই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এখানে কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ বা আক্রোশ নয়, বরং যারা দলের পরিচয় বহন করে অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই এই শুদ্ধি অভিযানের মূল লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী বলেছেন, দলের পরিচয় ব্যবহার করে যারা অনৈতিক কর্মকাণ্ড করবে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে- এটাই হলো নির্দেশনা। সে যেই হোক, সেটা দেখার বিষয় নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সাত নেতার পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে তারা। এদের মধ্যে একজন সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা। তার প্রবাসী পুত্রের বিরুদ্ধে টেন্ডারে প্রভাব বিস্তার করা, মন্ত্রণালয়ের ক্রয়কাজে হস্তক্ষেপ করে বিপুল অর্থগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

২০০৯ সালে একজন মন্ত্রী, যার পুত্র ছাত্রলীগ করতো, তার বিরুদ্ধে একটি হোটেল দখলের চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় দুজন মন্ত্রীর পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত থাকা, চাঁদাবাজির সুর্নির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। অন্য একজন মন্ত্রীপুত্রের বিরুদ্ধে টেন্ডারে হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব খাটিয়ে অন্যের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে এদের একজনের পুত্রের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালেও একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। বর্তমানে এমপি, এরকম ৩ জনের পুত্রের বিরুদ্ধে সুর্নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে এরকম একজন এমপির পুত্রের বিরুদ্ধে অন্যের জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে। একজনের এমপির পুত্রের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ। আর সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে তিনজনের বিরুদ্ধেই।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, শুদ্ধি অভিযান ধাপে ধাপে পরিচালিত হবে। একসঙ্গে সবাইকে গ্রেপ্তার করা বা একসঙ্গে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে জনমনে যেন আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এই অভিযানের মাধ্যমে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে যে, যারা ভালো তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তাদেরকে কোনোরকম হয়রানিও করা হবে না। সেজন্য জরুরি অবস্থায় বা অনির্বাচিত সরকাররা যেভাবে অভিযান পরিচালনা করেছিল, সেই অভিযানগুলোর সঙ্গে এই অভিযানের একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই অভিযানগুলো গ্রহণ করা হবে ধীরে ধীরে এবং পর্যায়ক্রমে। তবে যে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে সেই রোডম্যাপ অনুযায়ীই কাজ এগোবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৬,২০১৯)