দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: টেন্ডারমাফিয়া জি কে শামীম আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার রিমান্ডে রয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে। ইতিমধ্যে জি কে শামীমের যে ৭ দেহরক্ষী ছিল তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি বলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে। ৭ দেহরক্ষী শুধু জি কে শামীমের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিল। তাদের কাজ ছিল জি কে শামীমকে প্রটোকল দেওয়া। সিকিউরিটি সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিল।

এই ৭ দেহরক্ষী জানিয়েছে, তারা প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা করে বেতন পেতেন। এছাড়া যেদিন সাহেবের মন মেজাজ ভালো থাকতো সেদিন তারা প্রচুর উপরিও পেতেন।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম বলেছেন যে, আমাকে ধরে লাভ নাই। শেখ হাসিনা ছাড়া সরকারের সবাইকেই এখন কেনা যায়। আমার কথা বলেন, অন্য ব্যবসায়ীর কথা বলেন বা যারা টেন্ডার করছে তাদের কথা বলেন, সবাই কাউকে না কাউকে ঘুষ দিয়েই ব্যবসা করছেন। সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মহলে টাকা দিয়েই কাজ করতে হয়। বাংলাদেশে টাকা ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না।

জি কে শামীম এটাও বলেছেন যে, একমাত্র শেখ হাসিনাই ঠিক আছেন। তাকে কেউ পাঁচ টাকাও ঘুষ দিতে পারেনি। জিকে শামীম তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি।

জি কে শামীম জানিয়েছেন যে, আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতাকে তিনি ১০ কোটি টাকা শেখ হাসিনার কাছে দেওয়ার জন্য অফার করেছিলেন। কিন্তু ওই নেতা ৭ দিন পরে তাকে জানিয়ে দেন যে, এটা সম্ভব নয়। তবে জি কে শামীম চলমান শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, এটা যদি অনেক আগে শুরু হতো, তাহলে দেশের জন্য অনেক ভালো হতো।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জি কে শামীম বলেছেন যে, শুধু আওয়ামী লীগ বা প্রভাবশালী মহল না, ভবিষ্যতে যেন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য বিএনপির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাকেও তিনি টাকা পয়সা দিতেন। লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেককেও তিনি টাকা পয়সা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এই টাকাটা তাবিথ আউয়ালের মাধ্যমে তারেকের কাছে পৌঁছাত বলে জানিয়েছেন তিনি।

টেন্ডারমাফিয়া শামীম দাবি করেছেন, তিনি যে কাজ করেছেন তার সবই বৈধ টেন্ডারের মাধ্যমে পেয়েছেন। টেন্ডারে কোনো অনিয়ম করেননি এবং কাজে কোনও ফাঁকি দেননি। তবে তিনি এটা স্বীকার করেছেন যে, প্রত্যেকটা টেন্ডারের আগে টেন্ডারদাতাদের সাথে তার বৈঠক হতো। টেন্ডারে তিনটি বিষয় নিয়ে তিনি হস্তক্ষেপ করতেন। একটা হলো, কাকে কত ঘুষ দিতে হবে এবং সেই ঘুষের টাকাটা আলাদা করা হতো। টেন্ডারের স্পেসিফিকেশনস এমনভাবে করা হয় যেন জি কে বিল্ডার্স ছাড়া সেই কাজটা আর কেউ না পায়। তৃতীয়ত হলো, কাজের মান যেন ভালো হয় সেটা নিশ্চিত করা হতো।

জি কে শামীম দাবি করেছেন যে, এ পর্যন্ত তিনি যে কাজগুলো করেছেন প্রত্যেকটায় অতিরিক্ত টাকা খরচ হলেও কাজের কোয়ালিটি অত্যন্ত ভালো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, অতিরিক্ত যে টাকাটা দেওয়া হতো সেটা তিনভাগ করা হতো। একভাগ জি কে শামীম নিজের লাভ হিসেবে নিতেন। একভাগের টাকা টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাথে যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত ছিল তাদের দিতেন। আর এক ভাগের টাকা প্রশাসন ও অন্যান্য উর্ধ্বতন মহলকে দেওয়া হতো। জি কে শামীম দাবি করেছেন শুধু তিনি না, বাংলাদেশে যত বড় বড় টেন্ডার হয়, সব এই একই প্রক্রিয়ায় করা হয়।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো বলছে যে, জি কে শামীমের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, অস্ত্র আইন এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হবে। তবে টেন্ডারবাজি নিয়ে কোনও মামলা হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৭,২০১৯)