ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট। মিরপুরে যখন চলছিল প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া বধের প্রস্তুতি, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন গণভবনে সরকারী কাজে ব্যস্ত। মিরপুর স্টেডিয়ামে অজিদের যখন সপ্তম উইকেটের পতন ঘটলো, তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করে প্রধানমন্ত্রী ছুটলেন স্টেডিয়ামের দিকে।
এরপর একজন সাধারণ দর্শকের মতোই অশ্রুসিক্ত নয়নে সাক্ষী হলেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এক জয়ের। জাতীয় পতাকা হাতে স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে উড়ালেন। ম্যাচ শেষে সাকিব-তামিমদের সাথে দেখা করতে পৌঁছালেন ড্রেসিং রুম অবদি!
কখনো ক্রীড়াবিদদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আত্মবিশ্বাসের ঝুড়ি নিয়ে, কখনো ক্রীড়াবিদদের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সবথেকে বড় সমালোচকটাও ক্রীড়াক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অবদান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে পারবে না। বিশ্বের অন্যতম এই ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রীর আজ ৭৩ তম জন্মদিন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজকে যে অবস্তাহ্ন, সেটা দুই-একদিনে হয়ে ওঠেনি। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ মাঠে নামতো একটা সম্মানজনক হারের জন্য। আর আজ বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলতে নামে জয়ের জন্য। ক্রিকেটের আজকের এই উন্নতির পেছনে বিশাল একটা অবদান রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। খেলোয়াড়দের সাথে দুরুত্ব কমিয়ে আনা কিংবা উৎসাহ প্রদান করে সাহস জোগানোয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরই রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা।
দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ইংলিশ বধ। টেস্টে এই জয়ে বড় ভূমিকা ১৯ বছর বয়সী মেহেদী হাসান মিরাজের। প্রচণ্ড অভাব কাটিয়ে বেড়ে ওঠা মিরাজের গাড়িচালক বাবা দিতে পারেননি মাথা গোঁজার নির্দিষ্ট একটি ঠিকানাও। ৩০ অক্টোবর, ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিলেন বাড়ি দেয়ার। ১৮ দিনের মাথায় বুঝিয়ে দিলেন জমির দলিল।
সাকিব আল হাসানকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে, টাইগার অধিনায়কের জবাব ছিল, ‘বড় কারণ প্রধানমন্ত্রী’। কারণ হিসেবে সাকিব মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বহুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক বক্তব্যকে। যেটা সেদিনের সাকিবের মাঝে জাগিয়ে দিয়েছিল বড় কিছু করার স্পৃহা। সেই বড় হওয়ার তৃষ্ণা থেকেই সাকিব চেয়েছিল ভালো কিছু করার। পরবর্তীতে বদলে যাওয়া সাকিবের ভয়ঙ্কর রূপটা দেখেছে বিশ্ব ক্রিকেটের বোলাররা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন নিয়মিত দর্শক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মাঠে কিংবা টিভিতে, তা সম্ভব না হলে অন্তত খেলার খোঁজ রাখা- যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন সাকিব-তামিমদের সবথেকে বড় ভক্ত শেখ হাসিনা। বড় জয়ে যেমন জানান অভিবাদন, তেমনি পরাজয়ে ডুবে থাকা দলকেও যোগান সাহস।
যেমন সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফিফ হোসেনের ব্যাটে চড়ে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে আবেগ আপ্লুত হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনে অভিবাদন জানান তরুণ আফিফকে। পুরোটা সময় টিভির সামনে থেকে যে দোয়া করেছেন বাংলাদেশের জয়ের জন্য, সেটাও জানান।
আবার যখন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফেরে বাংলাদেশ দল। দলের ব্যর্থতায় চারদিকে তখন চলছে মাশরাফিদের মুণ্ডপাত। খবরের পত্রিকা কিংবা সাবেকরা, সমালোচনা করায় বাদ যায়নি কেউ। ব্যতিক্রমী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মাশরাফিদের ভূয়সী প্রশংসা করে সকলকে অনুরোধ করেন সমালোচনা না করার।
শুধু ক্রিকেট নয়। এই মাসে দেশের জন্য আর্চারীতে সর্বোচ্চ সম্মান বয়ে আনা রুমান সানার ঘটনাই ধরা যায়। সোনাজয়ী এই তীরন্দাজের আক্ষেপ ছিল যথাযথ মর্যাদা না পাওয়া নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দাওয়াত দিয়ে নিলেন গণভবনে। রুমান সানাকে মিষ্টিমুখ করানোর পাশাপাশি তাঁর সকল দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণাও দিলেন। রোমান সানার আক্ষেপ মিটলো। বাংলাদেশের মতো দেশে ক্রিকেটার না হয়েও যে প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্য পাওয়া যায় সেটা বুঝলেন।
ক্রোয়েশিয়ার নারী রাষ্ট্রপতি কলিন্দা গ্রাবারের ক্রীড়া প্রেম পৃথিবীব্যপী। রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজের দলকে সমর্থন দিতে মাঠে উপস্থিত থেকে জুগিয়েছেন উৎসাহ। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র মাঠে গিয়েই ক্ষান্ত হননি, ক্রীড়াবিদদের সুখে-দুঃখে মায়ের মতন পাশে থেকেছেন সবসময়।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৮,২০১৯)