দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চার বছর আগে দেশের উচ্চ আদালত মোবাইল ফোনের রিংটোন ও ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গানের ব্যবহার নিষিদ্ধের আদেশ দিলেও এখনও তা বন্ধ হয়নি। কোনও কোনও মোবাইলফোনে কল দিলে এখনও ওয়েলকাম টিউন হিসেবে শোনা যায় হিন্দি গান।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির অভাবে এখনও এসব রয়ে গেছে। অন্যদিকে রিংটোন ও ওয়েলকাম টিউন ইত্যাদি (থার্ডপার্টি কনটেন্ট প্রোভাইডার—সিপি) কারিগরি সমস্যার কারণে কিছু কিছু মোবাইল ফোনে এখনও এসব রয়ে গেছে। যা সরানো যাচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরে নতুন করে আর কোনও হিন্দি গান তাদের সার্ভারের মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের রিংটোন ও ওয়েলকাম টিউনে হিন্দি গানের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর আগে জাতীয় সংগীতকেও মোবাইল ফোনের রিংটোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহার অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় একই বছরের ১ মে বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নজরদারি হচ্ছে না। নজরদারি করতে হবে। তাহলেই এসব পুরোপুরি বন্ধ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্দেশ দিলেই শুধু হবে না, নির্দেশগুলো মানা হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।’

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এগুলো বিটিআরসির দেখভাল করার কথা। কিন্তু বিটিআরসির জনবল কম। এটাই সংস্থাটির দুর্বলতা। এই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। বিটিআরসির জনবল সংকট কেটে গেলে সব ধরনের বিষয়ে দৃষ্টি রাখা সহজ হবে।’

একাধিক কনটেন্ট প্রোভাইডার (সিপি) অপারেটরের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হাইকোর্টের ওই আদেশের পরে কোনও সিপি আর হিন্দি গান বা ভারতীয় উপমহাদেশের গান তাদের সার্ভারে আপলোড করেনি। ফলে হিন্দি গান আর নতুন করে কোনও মোবাইলে বাজেনি। কিন্তু যেসব গ্রাহক বছর মেয়াদি বা আজীবনের গ্রাহক হয়েছেন, তাদেরও মোবাইলফোন থেকে এসব গান আর সরেনি (বছর মেয়াদিগুলো নির্দিষ্ট সময়ের পরে বন্ধ হয়ে গেছে)। তবে, আজীবন গ্রাহকের মোবাইলে এসব গান এখনও রয়ে গেছে বলেও তারা দাবি করেন।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দেখা গেছে, কেউ একজন অন্য একটি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে পছন্দের কোনও গান ওয়েলকাম টিউন হিসেবে শুনতে পেলেন। তিনি চাইলে ওই গান তার মোবাইলেও সেট করতে পারতেন। তখন তিনি তার মোবাইলের স্টার (*) বাটনে ডাবল প্রেস করে মোবাইল ফোন সেট করে নিতে পারতেন। এভাবেই বহু গান ওয়েল কাম টিউন, রিংটোন হিসেবে সেট হয়ে গেছে। এগুলোই মোটামুটি রয়ে গেছে। এ সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ সংখ্যা একেবারে কম নয়।

নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কনটেন্ট প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তাদের গ্রাহকদের মধ্যে এখনও অন্তত ১৫ জনের মোবাইলের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে হিন্দি গান বাজছে। কারিগরি কারণে তারা এগুলো বন্ধ করতে পারছে না।

মোবাইল ফোন কনটেন্টের গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে ‘অন মোবাইল’। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ব্যবস্থাপক মাসুদুল ইসলাম বলেন, ‘অন মোবাইল মোবাইলফোন অপারেটর, রিংটোন ও ওয়েলকাম টিউন সেবাদানকারী কনটেন্ট প্রোভাইডাদের মধ্যে সেতু বন্ধনের মতো কাজ করে। অন মোবাইল হলো একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকরা তাদের মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের গান সেট থাকে।’

মাসুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ম্যানেজড সলিউশন দেই। হাইকোর্টের ওই নিষেধাজ্ঞার আগে যারা এসবের গ্রাহক হয়েছেন, সমস্যা হয়েছে তাদের নিয়ে। ওই সময় কেউ এক বছর, কেউ সারাজীবনের জন্য গ্রাহক হয়েছেন। তারা এসব বন্ধ করেননি। গ্রাহক বন্ধ করার অনুরোধ না পাঠালে মোবাইলফোন অপারেটর বা অন মোবাইল গ্রাহকের এই সেবা বন্ধ করতে পারেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই আদেশের পরে নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কাছে আমরা এ বিষয়ে করণীয় জানতে চেয়েছিলাম একাধিকবার। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর কাছ থেকে আমরা কোনও রেসপন্স পাইনি। সেজন্য আমরা ব্যবস্থাও নিতে পারছি না।’

অপারেটররা সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে মাসুদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ধরা যাক কোনও গ্রাহক জানালেন তিনি আর ওই সেবা চান না। তাহলে আমরা আমাদের সিস্টেম থেকে তা রিমুভ করে দিতে পারবো। অন্যদিকে অপারেটররা যদি গ্রাহকের কাছ থেকে জেনে নেন এবং এর পরিবর্তে কোন গান সেট করতে চান তাহলে সে মতে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’ যদি কেউ দেশীয় কোনও গান রিপ্লেস করে দিতে বলেন, তা করে দিতে পারবেন বলেও তিনি জানান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২৮,২০১৯)