ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি নিষিদ্ধ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে জুয়ার আসর বন্ধ করতে অবশেষে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এরই মধ্যে সকল সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে বিদ্যমান সকল শুল্ক স্টেশনে লিখিত আদেশে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে পণ্য ছাড় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যদিও বিদ্যমান বাণিজ্যের আমদানি নীতি অনুযায়ী এখনো নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় স্থান হয়নি ক্যাসিনো সরঞ্জাম। এ বিষয়েও শিগগিরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও এনবিআর সূত্র জানা গেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘যখন থেকে ক্যাসিনোর বিষয়টি উদঘাটিত হয়েছে তারপরই সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম আমদানি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। এরই মধ্যে দেশের সকল সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আমাদের কাস্টমস পয়েন্টে ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি নিষিদ্ধের লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদিও আদেশটি অনেকটা গোপনীয়ভাবে দেওয়া হয়েছে। কারণ হলো আমাদের আমদানি নীতিতে ওই সকল পণ্য নিষিদ্ধ কিংবা নিয়ন্ত্রিত তালিকায় নেই। তাই আমাদের অনেকটা কৌশলে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বায়নের যুগে নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত পণ্য যত কম আসে ততই ভালো। তাছাড়া ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত আনে এমন পণ্য যেমন মদ ও জুয়া আমাদের সংবিধানেও নিষিদ্ধ রয়েছে। তারপরও আমদানি নীতির সুযোগ নিয়ে কোনো কোনো আমদানিকারক কখনো ক্যাসিনো সরঞ্জাম ঘোষণায় আবার মিথ্যা ঘোষণা এসব পণ্য আমদানি করেছে। এ বিষয়টি আমাদের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর খতিয়ে দেখছে।’
‘দেশে বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী ১২ ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ। যেখানে ক্যাসিনো বা এর কোনো উপকরণের নাম নেই। ফলে অন্য কোনো পণ্যের মতো ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলে, বন্দরে শুল্ককর পরিশোধ করেই ক্যাসিনোর উপকরণ আমদানি করেছে ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা এমন এইচএস কোড (পণ্যের পরিচিতি) ব্যবহার করেছেন, যা দেশের বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়।’
এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ক্যাসিনোর পণ্য আমদানি স্থগিত করা হবে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছিলেন। শিগগিরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনো পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সন্দেহভাজন লেনদেন তথ্য থাকায় এ পর্যন্ত ৮০ আয়কর নথি জব্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে যাদের নাম এসেছে কিংবা আমাদের যাদের সন্দেহ হচ্ছে তাদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হচ্ছে এবং তাদের ট্যাক্স ফাইল আমাদের সিআইসি যাচাই করে দেখছে। এ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৮০টি এরূপ ফাইল আমরা জব্দ করেছি।’
এদিকে মিথ্যা ঘোষণাসহ বিভিন্ন কৌশলে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করেছে এমন ২০ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
এরই মধ্যে আমদানিকারক পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজের মালিক সুরঞ্জন শেঠ তাপস, পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বেত্রাবতি ট্রেডের মালিক মো. আশরাফুল ইসলাম ও আমদানিকারক এ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আহসানুল আজমসহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি। যদিও জিজ্ঞাসাবাদের তারা শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
সূত্র জানায়, জুতা, কম্পিটার, খেলনা, মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ কিংবা ফার্নিচারের আড়ালে আমদানি হয়েছে ক্যাসিনো সরঞ্জাম। অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতির সুযোগ নিয়ে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, জুয়ায় ব্যবহৃত প্রতিটি মেশিন ও সরঞ্জামের দাম প্রায় ১ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা। মিথ্যা ঘোষণায় কোটি কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে আসা চালানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গত ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম খুঁজে পেয়েছি। কোনো আইনের লঙ্ঘন করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনোতে প্রতি রাতে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলা হয়। রাজধানীতে অন্তত ৬০টি ক্যাসিনোর তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলে ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। আটক করা হয় ১৪২ জনকে। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনোর রোলেট, স্লট মেশিন, জুয়ার গুটিসহ অন্যান্য সামগ্রী। এরপর সারাদেশে র্যাব-পুলিশের অন্তত ৩৫টি অভিযানে ২৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুবলীগ ও কৃষক লীগের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন ক্লাবের নেতৃবৃন্দ। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো বেরিয়ে এসেছে অনেক ভিআইপি ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের নাম।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ০২,২০১৯)