রাজবাড়ীতে বিপৎসীমার ওপরে পদ্মার পানি
রাজবাড়ী প্রতিনিধি: ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ায় হু হু করছে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। এতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ১৩ ও পাংশার সেনগ্রাম গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া পয়েন্টে ১ ও সেনগ্রাম পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সদরের মহেন্দ্রপুর গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে নদী তীরবর্তী ফসলি জমিসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার হাজার হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে যাতায়াতের রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা। বিস্তৃর্ণ এলাকা ডুবে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে নিম্নাঞ্চলগুলোতে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র স্রোতের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত এক সপ্তাহের বেশি সময়ের ভাঙনে জেলা সদরের মিজানপুরের মহাদেবপুর, গোদার বাজার, গোয়ালন্দের ছোটভাকলা, দেবগ্রাম কাওলজানি ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শতশত বসতবাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে ভাঙনের বিলীন হয়েছে ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শতশত বসতবাড়ি, শতশত বিঘা ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে জেলার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
অপরদিকে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দক্ষিণ পশ্চিমঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাটসহ ওই এলাকার বসতবাড়ি ও স্থাপনা।
পানিবন্দিরা জানান, হঠাৎ নদীর পানি বৃদ্ধিতে তাদের চলাচলের রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে নানাবিধ সমস্যাসহ গবাদি পশুর খাবার সংকট। ৫ থেকে ৭ দিন ধরে পানিবন্দি হলেও এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি। এছাড়া পানির কারণে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। বাড়ির চারিদিকে পানি ওঠায় চলাফেরাও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন তারা চলাচলের জন্য নৌকা ব্যবহার করছেন।
দৌলতদিয়ায় নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, গত কয়েকদিনের ভাঙনে তাদের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের ঢল্লাপাড়া, বেপারীপাড়া ও জলিল মন্ডলেরপাড়ার শতশত বিঘা ফসলি জমিসহ প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। আরঙ ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে কয়েকশ পরিবার। কিন্তু ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। এসব এলাকা ভাঙার কারণে এখন দৌলতদিয়া ঘাট হুমকির মুখে। স্রোত গিয়ে সরাসরি ঘাটে আঘাত করছে। ঢল্লাপাড়া, বেপারীপাড়া ও জলিল মন্ডলেরপাড়া রক্ষা হলে ঘাটও রক্ষা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে রাজবাড়ী সদরে ৩টি, গোয়ালন্দে ১টি ও কালুখালীতে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমে গেলে বিশেষ ক্লাসের মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে।
লঞ্চঘাট সুপারভাইজার মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, স্রোতের কারণে লঞ্চঘাট হুমকিতে রয়েছে। লঞ্চ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তীব্র স্রোতে কিছুদিন ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। বর্তমানে স্রোতের কারণে ১নং ফেরি ঘাট বন্ধ রয়েছে এবং ২নং ঘাটেও সমস্যা রয়েছে। ঘাট এলাকার ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গোয়ালন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ সরকার জানান, দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষায় ১নং ও ২নং ফেরি ঘাটে জরুরি আপোদকালীন ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। পুরো ঘাট এলাকায় কাজ চলবে। এছাড়া দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের অন্যান্য ভাঙন স্থানে এখনো কাজ শুরু হয়নি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা রক্ষায় জরুরি ডাম্পিংয়ের কাজ করছে। রাজবাড়ীতে ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দৌলতদিয়া ঘাট রক্ষায় কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলায় প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে জিআর চাল বিতরণ করা হবে। বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ০৩,২০১৯)