হাসপাতাল থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে সম্রাট
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অবৈধ ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট থেকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পর শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তাকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার সম্রাট ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাকে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকায় আনা হয়। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখান থেকে সম্রাটকে হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
ওইদিন সকালেই সম্রাটকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত রোববার ভোররাতে যুবলীগের নেতা সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হককে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে আটক করে র্যাব।
এরপর সম্রাটের তথ্যের ভিত্তিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রোববার দুপুরে তার কার্যালয় কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযান চালান। সেখান থেকে পিস্তল, গুলি, ইয়াবা বড়ি, বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া দুটি ক্যাঙারুর চামড়া, বৈদ্যুতিক শক দেয়ার দুটি যন্ত্র ও লাঠি উদ্ধার করা হয়।
বন্য প্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে রোববার রাতে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে র্যাব। এর মধ্যে ঢাকার রমনা থানায় তাদের বিরুদ্ধে দুই আইনে দুটি মামলা হয়েছে। আর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় আরমানের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা হয়েছে।
রমনা থানায় দুটি মামলার মধ্যে একটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে, অন্যটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় শুধু সম্রাটকে আসামি করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্রাটের সঙ্গে আরমানকেও আসামি করা হয়।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ মামলায় সম্রাটকে গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মতিঝিল এবং আশপাশের এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন মিল্কী, যুবলীগ দক্ষিণের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ এবং দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম তারেক।
আধিপত্য বিস্তার এবং অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ বিরোধের জেরে আরিফ-তারেক গ্রুপ মিল্কীকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার পর তারেক র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সম্রাটের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আরিফ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এ সুযোগে সম্রাট পুরো ফাঁকা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময় তার সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল ইসলাম আরমান এবং একেএম মমিনুল হক সাঈদকে তিনি যুবলীগের পদ দেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি পুরো ঢাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন।
সম্রাট ব্যাপক ক্ষমতাবান হওয়ার পর যুবলীগ নেতা এবং টেন্ডার কিং জি কে শামীমও তার দলে নাম লেখান। শুরুতে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান তিনি।
বিশাল ক্যাডার বাহিনী সাজানোর পর জিসানের সঙ্গেও সম্পর্ক ত্যাগ করেন। মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোর ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণও চলে যায় তার হাতে।
এভাবেই সম্রাট ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের ডন হয়ে ওঠেন। তার প্রভাব বাড়তে থাকে। অপরাধ জগতের ক্ষমতার সঙ্গে যোগ হয় রাজনৈতিক পদ-পদবির ক্ষমতা। সব ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিভিন্ন ক্লাবে চালু করেন ক্যাসিনো।
র্যাব বলছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দলের ছত্রছায়ায় এবং ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন ক্লাব পরিচালনা করতেন সম্রাট। তার নিয়ন্ত্রণে ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোসহ জুয়ার আসর বসত। এই ক্যাসিনো থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১২,২০১৯)